সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটল মাথাভাঙ্গা বিধানসভার অন্তর্গত পাড়া ডুবি গ্রামে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭৫তম জন্মদিনে এক অভিনব উপায়ে শ্রদ্ধা জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রফুল্ল বর্মন। পেশায় রাঁধুনি হলেও, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ভক্তির জোরে তিনি নিজের বাড়িতেই একটি মোদির মন্দির তৈরি করেছেন। গতকাল তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে এক বিশেষ অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে ৭৫ কেজি ওজনের বিশাল কেক কেটে উদযাপন করেন প্রফুল্লবাবু। পাশাপাশি তিনি নিজের বাড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি মূর্তি বসান। শুধু তাই নয়, এদিন হিন্দুস্তান মোড় থেকে পাড়া ডুবি পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। মূর্তি নিয়ে এই শোভাযাত্রায় সাধারণ মানুষ ছাড়াও স্থানীয় নেতৃত্বও যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন মাথাভাঙ্গার বিধায়ক সুশীল বর্মন।
পাড়া ডুবি গ্রামের এক সাধারণ রাঁধুনি, প্রফুল্ল বর্মন। সাধারণ মানুষ হয়তো, কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ও ভক্তি যে কতটা গভীর, তা দেখিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে। নিজের বাড়িতে মন্দির গড়লেন, সেখানে বসালেন নরেন্দ্র মোদির মূর্তি। ৭৫ কেজি কেক কেটে উদযাপন করলেন প্রধানমন্ত্রীর জন্মজয়ন্তী। শুধু তাই নয়, শোভাযাত্রা করে গোটা গ্রামজুড়ে পৌঁছে দিলেন তাঁর অটল ভক্তির বার্তা।
প্রশ্ন জাগে—এই ভক্তি কি একমাত্র রাজনীতির প্রতি, না এক মানুষকে দেবতার আসনে বসানোর প্রবণতা? এক সময় আমরা দেখেছি, নেতা-নেত্রীদের ছবিতে ধূপকাঠি, ফুল দিয়ে পূজা করা হয়েছে। কিন্তু এখানে ভক্তি যেন এক ধাপ এগিয়ে—প্রফুল্লবাবু ঘোষণা করেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে আশীর্বাদ না দিলে তিনি ভাত বা রুটি গ্রহণ করবেন না। এ এক চরম আত্মনিবেদনের উদাহরণ, আবার একই সঙ্গে আত্মবিধ্বংসীও।
সমাজের কাছে এ ঘটনা যেমন বিস্ময়কর, তেমনি উদ্বেগজনক। ভক্তি যখন সীমানা ছাড়িয়ে অন্ধতার রূপ নেয়, তখন সেটি ব্যক্তিগত জীবন ছাড়াও সামাজিক মননকেও প্রভাবিত করে। একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, দেশের প্রধানমন্ত্রী—তাঁকে দেবতার আসনে বসালে গণতন্ত্রের মূল মূল্যবোধই ক্ষুণ্ণ হয় না কি?
তবে অন্যদিকে, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে সাধারণ মানুষের আবেগ, তাঁদের স্বপ্ন, তাঁদের প্রত্যাশা। প্রফুল্ল বর্মনের কাছে প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র একজন নেতা নন, তিনি আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। তাই হয়তো মন্দির গড়ে সেই বিশ্বাসকে তিনি অমর করতে চেয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই অটল বিশ্বাস কি যুক্তির আলোতে টেকে? না কি এটি আসলে আমাদের সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিপূজার এক দৃষ্টান্ত? প্রফুল্লবাবুর আত্মত্যাগের প্রতিজ্ঞা আমাদের একদিকে মুগ্ধ করে, অন্যদিকে আতঙ্কিতও করে। ভক্তি যদি জীবনকেই বিপন্ন করে তোলে, তবে সেই ভক্তিকে কি আদৌ পূজা বলা যায়?
আমাদের সমাজে প্রয়োজন ভক্তির নয়, প্রয়োজন সমালোচনার সঙ্গে ভালোবাসা মেশানো সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গির। একজন নেতা, একজন প্রধানমন্ত্রী দেশের সেবক, ঈশ্বর নন। তাঁকে শ্রদ্ধা করা যায়, কিন্তু পূজা নয়। প্রফুল্লবাবুর ঘটনা তাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ভক্তি সুন্দর, কিন্তু অন্ধ ভক্তি বিপজ্জনক।

More Stories
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক
প্লাবনের আশঙ্কা ও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস: রাজ্য সরকারের সতর্কবার্তা