সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ প্রয়াত মদনমোহন মেদ্দা ছিলেন কংগ্রেসের হুগলি জেলার এক প্রভাবশালী নেতা। ১৯৭১ সালে প্রথমবার বিধায়ক, এরপর টানা ১৯৭২–১৯৭৭ পর্যন্ত বিধায়ক ও বিধানসভায় সক্রিয় ভূমিকা। কংগ্রেসের যুব সংগঠন ও কিষান ক্ষেতমজুরের নেতৃত্বে থেকেছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলে তাঁর ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে প্রফুল্ল সেন। স্থানীয় প্রবীণ কংগ্রেস কর্মীরা জানান — “মদনবাবু শুধু ভোটের রাজনীতিতেই ছিলেন না, চাকরি, সমাজসেবা—সব ক্ষেত্রেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন,কংগ্রেস আমলে তিনি অনেকেরই চাকরিে করে দিয়েছেন।”
পারিবারিক উত্তরাধিকার, রাজনৈতিক শেকড় ও শিক্ষার বলে ২০১১ সালে পিতার মৃত্যুর পর দেবাশীষ মেদ্দা কংগ্রেস–তৃণমূল জোটের প্রার্থী হিসেবে গোঘাট বিধানসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারকের কাছে পরাজিত হন, তবে তৎকালীন সময়ে গোঘাটের বুকে বামফ্রন্ট যখন লক্ষ ভোটে এগিয়ে থাকতো, দেবাশীষ বাবু তখন এক ঝটকায় লড়াই করে সেই মার্জিন কমিয়ে ৪ ২ ৬ ৫ তে নিয়ে এসেছিলেন।। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেই সময় গোঘাটে সিপিএমের লাল রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে বামফ্রন্টের দুর্গে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়াই ছিল বড় সাফল্য।
২০১৫ সালে তপন দাশগুপ্তর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন দেবাশীষ মেদ্দা। প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রাক্তন এমএলএর উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর সংগঠনে সম্মানজনক জায়গা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জেলা কংগ্রেসের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১১-১২ সালে দেবাশীষ মেদ্দা হুগলি জেলা কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি পদের দায়িত্ব সামলেছেন। তারপরে গোঘাট এক নম্বর ও দু’নম্বর ব্লকের কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটের পদেও তিনি সফলভাবে দায়িত্ব সামলেছেন। কিছুদিন আগেই প্রকাশিত আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার নতুন তালিকায় দেবাশীষ মেদ্দার নাম না থাকায়, স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় রাজনীতিতে বিস্ময়ের সঞ্চার হয়েছে। যারা ভোটে হেরেছেন তাঁরাও দায়িত্ব পেয়েছেন, অথচ মদনবাবুর পুত্রকে বাদ দেওয়া নিয়ে কর্মীদের মধ্যে হতাশা। অনেকেই মনে করছেন, তিনি একজন সৎ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, পাশাপাশি শিক্ষাকতার কারণে সমাজে গ্রহণযোগ্য মুখ। তাঁর মতো একজন নেতাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের কৌশলগত ভুল হতে পারে। দেবাশীষ মেদ্দা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে সরল উত্তর দিয়েছেন—
“দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমার কিছু বলার নেই। তবে আমি ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী,“আমি কোনো দুর্নীতি বা দলের ক্ষতি হয় এমন কাজে জড়িত নই। তাই ভবিষ্যতে নির্বাচনী টিকিট নিয়ে আমি আশাবাদী।” — দেবাশীষ মেদ্দা।”
এমন একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাকে বাদ দেওয়া হলে সাধারণ কর্মীর মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল,তবে শুধু দেবাশীষ মেদ্দা নন, তৃণমূল জন্ম নেওয়ার সময়ের গোঘাটের বিশিষ্ট নেতা মনোরঞ্জন পালও বাদ হয়েছেন। মনোরঞ্জন বাবু একটি সংবাদমাধ্যমে আরো বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন যে দল সিডিউল কাস্টদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে এবং তাদের উন্নতির কথা ভাবছে অথচ জেনারেল কাস্ট মধ্যবিত্ত মানুষদের কথা ভাবছে না। এখন দেখার বিষয় নতুন পদাধিকারী নেতৃত্ব ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে কতটা সাফল্য আনতে পারে। ।

![]()

More Stories
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লড়াই আজও প্রাসঙ্গিক — আরামবাগের সিপিআইএমের নেতা সমীর চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতায় উঠে এল সংগঠনের বাস্তবতা
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পড়ুয়া সংকটে গোঘাটের লাইব্রেরিগুলি – পাঠক টানতে উদ্যোগের খোঁজে গ্রন্থাগারগুলি
কোলাহলের মাঝেই চলছে অখণ্ড হরিনাম— হুগলির বদনগঞ্জের কয়াপাট বাজারের মন্দিরে ৪৬ বছরের ঐতিহ্য