December 1, 2025

চারশো বছর সাক্ষী ‘সিদ্ধেশ্বরীকালী পুজো ’ — গোঘাটের কাঁটালি মন্দির

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ গ্রামীণ নিস্তব্ধতার মাঝেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হুগলীর গোঘাটের প্রাচীন কাঁটালি সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। প্রায় চারশো বছর আগে গড়ে ওঠা এই মন্দির আজও ভক্তদের অপরিসীম আস্থার কেন্দ্র। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবী সিদ্ধেশ্বরী শুধু শক্তির প্রতীক নন, এলাকার রক্ষাকর্ত্রীও বটে।

মন্দিরের প্রায় ত্রিশতম পুরোহিত শৈলেন চক্রবর্তী জানান, এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল প্রাচীন চক্রবর্তী পরিবারের হাতে। প্রথম দিকে ছিল একটি কাঁচা, মাটির গঠন — ঘন জঙ্গলের মাঝে, যেখানে সন্ধ্যার পর ভক্তের চেয়ে ভয়ই ছিল বেশি, কথায় ছিল “যদি পার হলি পচাখালি, তবে জানবি বাড়ি ফিরলি “, পরে ধীরে ধীরে মন্দিরের সংস্কার হয়, তৈরি হয় পাকা গঠন ও নিত্যপূজার ব্যবস্থা। চিন্ময়ী রূপে মাকে পুজো করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস অনেকেরই মনস্কামনা পূরণ হয়।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, একসময় মিহির সর্দার নামে এক বিখ্যাত ডাকাত এই মন্দিরে দেবীর আরাধনা করতেন।মায়ের থেকে শক্তি নিয়ে যেতেন। বিশ্বাস ছিল, দেবীর আশীর্বাদে তাঁর অভিযান সফল হয়। আজও এলাকার প্রবীণরা বলেন, “ সিদ্ধেশ্বরী মা-র কৃপা ছাড়া এলাকায় কিছুই হয় না।”

এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসও। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী’তে এই মন্দিরের উল্লেখ করেছিলেন। সেই সূত্রে কাঁটালি সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরকে অনেকেই ‘দুর্গেশনন্দিনীর কালী মন্দির’ নামেও চেনেন।

কার্তিক মাসের কালীপুজোর সময় মন্দির প্রাঙ্গণ পরিণত হয় মেলায়।বৈদিক মতে পুজো হয়,ছাগবলিও হয়। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত এসে ভিড় জমান দেবীদর্শনে। চলে আরতি, বলি, প্রসাদ বিতরণ ও সারারাতব্যাপী কীর্তন। স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও, পরিবেশে থাকে ঐতিহ্য আর ভক্তির আবহ। এছাড়াও নিত্য পুজো বেলা ১ ২ টায় ও সন্ধ্যা আরতি হয় এবং অমাবস্যায় বিশেষ পুজো হয়।

মন্দিরের এক সেবায়েত বলেন, “মা সিদ্ধেশ্বরীর শক্তি অক্ষয়। কত বিপর্যয়, কত প্রাকৃতিক দুর্যোগ গিয়েছে—তবু এই মন্দির আজও অটল দাঁড়িয়ে আছে।”

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের উদ্যোগে যদি মন্দিরটিকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়া হয়, তবে গোঘাটের এই প্রাচীন ঐতিহ্য আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছবে।

Loading