October 5, 2025

চিত্র: সৌজন্যে গুগল

বাংলা ভাগের চক্রান্ত! হুগলিকেও ভাগ?

সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: দুই বিজেপি নেতার বাংলা ভাগের ডাককে কেন্দ্র করে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী সকলেই গর্জে উঠেছেন প্রতিবাদে। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে কংগ্রেস-সিপিএম সকলেই এই দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকেই আবার এর পিছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের গভীর চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন। উল্লেখ্য, দুই বিজেপি সাংসদ আলিপুরদুয়ারে জন বার্লা আগেই উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবিতে সরব হয়েছেন। এমনকি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকে নিয়ে আলাদা রাজ্য গঠন করা যেতে পারে বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন বলেও জানিয়েছিলেন। এবার একই দাবিতে সরব হলেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। তিনি এবার জঙ্গলমহলকে আলাদা রাজ্য করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ১৮০৩ সাল থেকে ১৮৩২ সাল পর্যন্ত  যে পৃথক জঙ্গলমহল জেলা ছিল। সেটাকেই আলাদা করে রাজ্য করার দাবি তিনি তুলেছেন। তিনি ওই ভিডিও বার্তায় বলেন, বাংলার মানুষের উন্নয়নের জন্য আমরা পৃথক জঙ্গলমহল রাজ্যের দাবি তুলতেই পারি। আমরা ভারতীয়। সেই হিসেবে কোন নতুন রাজ্যের দাবি করাটা কোন রাজ্যের বিরোধিতা করা নয়। তাঁর দাবি, আসাম ভেঙ্গে মনিপুর, মিজোরামের মত ছোট রাজ্য হয়েছে এবং সেগুলো খুব উন্নত। তিনি ভিডিও বার্তায় নতুন যে জঙ্গলমহল রাজ্যের মানচিত্র তুলে ধরেছেন তাতে তিনি স্থান দিয়েছেন বীরভূম, বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই মেদিনীপুর আর হুগলির কিছুটা অংশ। অর্থাৎ সৌমিত্র খাঁ-এর প্রস্তাবিত নতুন রাজ্যের জন্য হুগলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হবে। আর এই দুই বিজেপি সাংসদের দাবি যদি পূরণ করতে হলে পশ্চিমবঙ্গ ভেঙে তিনটি টুকরো হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বলতে কলকাতা, হাওড়া সহ মাত্র কয়েকটা জেলা পড়ে থাকবে। যদিও বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, রাজ্য ভাগের এই প্রস্তাব বিজেপি মানে না। এগুলি যাঁরা বলছেন তাঁদর ব্যক্তিগত মতামত। রাজ্য ভাগের এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, একদিকে বিজেপি বলছে পশ্চিমবঙ্গ দিবস, আর একদিকে তাদের সাংসদেরা পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার ডাক দিচ্ছেন। এই সব ষড়যন্ত্র কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ বলেন, এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচারমুখী মন্তব্য। বিজেপি ঝাড়গ্রামে হেরে গেছে। যে যে জেলার নাম উনি করছেন সেগুলিতে বিজেপির অবস্থা শোচনীয়। মানুষ বিজেপিকে চায় না। তাই বিজেপি নতুন গেম প্ল্যান করছে। রাজ্য সরকারকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছে। কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যভাগ কোনভবেই মেনে নেওয়া যাবে না। রাজ্যের মানুষ এটা মানবে না তা বিজেপির নেতারাও জানেন। তবু কেন তাঁরা সাংসদদের এইসব দাবিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এর পিছনে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা, এটাই প্রশ্ন। তবে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ এর পিছনে গভীর রাজনৈতিক পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফলাফল যে খুব ভাল হবে না তা তারা আগেই বুঝতে পেরেছে। তাই অঞ্চলভিত্তিক পৃথক স্বপ্ন দেখিয়ে বেশ কিছু আসনে জয়ের ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আর এক্ষেত্রে ব্যবহার করছে রাজ্যের রাজ্যপালকে। তাই তিনি দিল্লি থেকে উত্তরবঙ্গ ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলের আর একটা অংশের আশঙ্কা, আগামী দিনে এই বঙ্গভঙ্গের দাবিকে কেন্দ্র করে গোর্খাল্যান্ডের মত আবার বাংলাজুড়ে নতুন অরাজকতার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষ সেই অরাজকতাকে যে কোনভাবেই মেনে নেবেন না তা একপ্রকার নিশ্চিত।

Loading