October 5, 2025

হাওড়ার পল্টন সেতুকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস, ইংরেজদের স্বার্থেই তৈরি হয় পল্টন সেতু

সোমালিয়া ওয়েব নিউজ, হাওড়া: ব্রিটিশরা পলাশীর যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কয়েক দশক পরে কলকাতাকে ভারতের রাজধানী ঘোষণা করেছিল। ব্রিটিশ তথ্য অনুসারে ১৭৭২-১৯১২ সাল অব্দি কলকাতাই ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী হিসাবে ছিল। আর দেশের রাজধানী হওয়ার সুবাদে কলকাতার উন্নয়নে বৃটিশদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছিল। কলকাতা থেকে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করার ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম ছিল গঙ্গা। তবে গঙ্গা পারাপার করার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল ইংরেজ প্রশাসনকে। গঙ্গার নাব্যতা অধিক থাকার কারণে বড় জাহাজও কলকাতা ও হাওড়ার মাঝে গঙ্গার জলপথ ধরে অবাধেই যাতায়াত করতে পারত। তবে ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে হাওড়া ও কলকাতা যাতায়াতের সমস্যা ছিল যথেষ্টই। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য ইংরেজরা তৈরি করেছিল
দুটি সেতু। প্রথম সেতুর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে সময় লেগেছিল ১৯ বছর। পাশাপাশি নতুন হাওড়া সেতু নির্মাণে ৩০ বছর সময় লেগেছিল। যদিও ইংরেজরা সেতু নির্মাণে ” ধীরে চলো” নীতি নিয়েই এগিয়েছিল। তবে সেতু যে আগে ছিল না তেমন নয়। সেই সেতু পরিচিত ছিল ভাসমান সেতু নামে। সারি সারি নৌকা একসঙ্গে বেঁধে তার উপরে পাটাতন পেতে তৈরি হয়েছিল এই ভাসমান সেতু। এতে ছিল জাহাজ ও স্টিমার চলাচলের সময় সেতুর মাঝ বরাবর থেকে দড়ি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। এই সেতু লম্বায় ১৫২৮ ফুট ও চওড়ায় ছিল ৪৮ ফুট। চলাচলের জন্য সেতুর দুই পাশে সাত ফুটের থাকতো ফুটপাত। পাশাপাশি জাহাজ ও স্টিমার চলাচলের জন্য সেতুর মাঝখানে ২০০ ফুট খুলে দেওয়া হত। স্টিমার এলেই সেতু বন্ধ করে দেওয়া হত। স্টিমার চলে গেলে আবার খুলে দেওয়া হতো সেতু। এই পুরনো হাওড়া ব্রিজের নকশা বানিয়েছিলেন ব্রিটিশ ভারতে রেল কোম্পানির খ্যাতনামা ইঞ্জিনিয়ার।স্যর ব্র্যাডফোর্ড লেসলি।
রাতে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা চালু হওয়াতে যানজটের সমাধান হচ্ছিল না। ফলে সে সময় থেকেই হাওড়াতে একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকে ইংরেজ প্রশাসন। এরপর বৈঠক ডেকে নতুন সেতু নির্মানের জন্য বৈঠক হয় ও কমিটি তৈরি হয়। বন্দরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জন স্কট, পূর্ব রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আর এস হাইট এবং কলকাতা পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ার ম্যাককেব ওই কমিটির সদস্য হন। ভাবনা শুরু হয়, ভাসমান সেতুর বদলে একটি ক্যান্টিলিভার সেতু নির্মাণের। বহু আলোচনা ও নক্সা এবং বৈঠকের পর ১৯৪২ সালে নতুন হাওড়া ক্যান্টিলিভার সেতু নির্মাণের পর খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। সেই সময় থেকে চির বিদায় নেয় গঙ্গার উপরে থাকা ওই পুরানো ভাসমান সেতুটিও। সবমিলিয়ে আজও ভারত তথা বিশ্ববাসীর কাছে হাওড়া ব্রিজ।

Loading