October 5, 2025

হারিয়ে যাচ্ছে তালগাছ, গরমের সময় তালশাঁস খেতে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

‌সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: গরমকালের এক উপাদেয় খাদ্য হল তালশাঁস। কিন্তু তাল গাছের সংখ্যা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই সুস্বাদু খাদ্যটিও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। অথচ একসময় বাংলার বিভিন্ন গ্রামের পাশাপাশি আরামবাগ মহকুমা জুড়েও পুকুর ধারে দাঁড়িয়ে থাকতো সারি সারি তালগাছ। দূর থেকে জানান দিত ওখানে একটা পুকুর আছে। কাছে গেলে জল পাওয়া যাবে। গ্রীষ্মের দুপুরে সেখানে মানুষ থেকে পশুপাখি জলের জন্য ছুটে যেত। থাকতো অন্যান্য গাছগাছালিও। তাদের ছায়ায় একটু বিশ্রাম নেওয়া যেত। কিন্তু তালগাছ এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। বহুগ্রামই  এখন তালগাছশূন্য। যেখানে আছে সেগুলিও সংখ্যায় খুবই কম। কিছুদিন পর তাদেরও আর কোন অস্তিত্ব থাকবে বলে মনে হয় না। আর তখন গ্রাম থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে তালশাঁসও। অথচ গরম পড়লে এই তালশাঁস বিক্রি করে অনেকেই সাময়িকভাবে অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজে পেত। খানাকুল, পুড়শুড়া, আরামবাগ, গোঘাট চারটে থানা এলাকাতেই বহু মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেউ লোকের গাছ থেকে কচি তাল পেড়ে এনে তা বাজারে নিয়ে গিয়ে শাঁস বিক্রি করতেন। আবার কেউ বা কম দামে ওই তাল কিনে কিছু লাভ রেখে সেই তালশাঁস বিক্রি করে দিতেন। এভাবেই নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি গরমের সময় উপার্জন করত। এখনও পথে পথে সাইকেলে করে কচি তাল বিক্রি করেন পুরশুড়ার রাজু সামন্ত। তিনি বলেন, এখন তো তাল পাওয়াই মুশকিল। তবুও যেদিন তাল নিয়ে বের হই, সবই বিক্রি হয়ে যায়। এক একটা তাল ১০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করি। যাদের গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করি তাদেরকে  কিছু টাকা দিতে হয়। তবে এখন তালগাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশি লাভ করার সুযোগ থাকে না। আর বেশিদিন তাল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আরামবাগ বসন্তপুর আমতলার বাসিন্দা সুকুমার মণ্ডল তিন বছর ধরে  তালশাঁস বিক্রি করেন। তিনি বলেন, তাল সংগ্রহ করতে পারলেই তিনি বসন্তপুর ঋ মোড়ে হাজির হয়ে যান। খরিদ্দারের অভাব হয় না। যাঁরা তালশাঁসের উপকারিতা জানেন তাঁরা এই গরমের সময় নিয়মিত তালশাঁস খান। আর যারা বোঝেন না তাঁরাও শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য খেয়ে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, আর কতদিন গ্রামে-গঞ্জে এই তালশাঁস পাওয়া যাবে?‌ এখনই সচেতনতা তৈরি করে গ্রামে গ্রামে তালগাছ না লাগালে হয়ত গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাবে এই উপাদেয় বস্তুটি।

Loading