সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে রাজনৈতিক সৌজন্যের ঘটনা ঘটে গেল গোঘাটের কাঁটালি গ্রামে । মঙ্গলবার বছরখানেক ধরে অসুস্থ শয্যাশায়ী বিজেপি কর্মী কানাই সাঁতরার বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা সরস্বতী দেবীর হাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তুলে দিলেন তৃণমূল নেতা তথা গোঘাট -১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন পাল। এই ঘটনায় অভিভূত কানাইবাবু। কানাইবাবু জানান, বছরখানেক আগে গত জানুয়ারি মাসে তিনি গোঘাটের পান্ডুগ্রামে বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। তাঁর বাঁ পা ভেঙে যায়।
শিরদাঁড়ায় গুরুতর চোট লাগে। প্রথমে তাকে কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, কানাইবাবুর চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। তাই তাঁকে কলকাতার কোন বড় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। এরপরই কানাইবাবুকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসা চলে। বাঁ পায়ে ও শিরদাঁড়ায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের জন্য তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু আর তাঁর পক্ষে খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। তাই বাড়িতে বাড়ীতে ফিরে আসতে বাধ্য হন। পরে জুন মাসে বর্ধমানে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, অপারেশন সঠিক হয়নি। তাই আবার অপারেশন করতে হবে। তখনই আবার নতুন করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আবার সেপ্টেম্বর মাসে কানাইবাবু বর্ধমানে ডাক্তার দেখান। তখনই চিকিৎসক জানিয়ে দেন, অপারেশন ছাড়া কোন উপায় নেই। এর জন্য প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হবে।
উল্লেখ্য, কানাইবাবু আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকেই একেবারে বিছানায় শয্যাশায়ী। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, বসতেও পারেন না। এদিকে টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছিলেন না। আর তাই এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডই তাঁর কাছে শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। দুয়ারে সরকার কর্মসূচি শুরু হতেই ভেবেছিলেন স্বাস্থ্য সাথী কার্ড করাবেন। কিন্তু ক্যাম্পে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা নেই। তাই তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জনবাবুর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই মনোরঞ্জনবাবু তাঁদের দিকে সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এবিষয়ে মনোরঞ্জন বাবু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কখনও কোন প্রকল্প নিয়ে রাজনৈতিক রঙ দেখেন না। যা কিছু করেন রাজ্যের সকল মানুষের জন্যই করেন। এটা আগেও প্রমাণিত হয়েছে। কানাইবাবু বলেন, আমি বিজেপি করতাম।
মিটিং-মিছিলেও যেতাম। কিন্তু তারপরেও মনোরঞ্জনবাবুকে বিষয়টি বলতেই তিনি আজ আমাদের বাড়িতে এসে সরকারি কর্মীদের নিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর ছবি তুলে সঙ্গে সঙ্গে কার্ড দিয়ে গেলেন। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পাশাপাশি মনোরঞ্জনবাবুকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
![]()

More Stories
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লড়াই আজও প্রাসঙ্গিক — আরামবাগের সিপিআইএমের নেতা সমীর চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতায় উঠে এল সংগঠনের বাস্তবতা
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পড়ুয়া সংকটে গোঘাটের লাইব্রেরিগুলি – পাঠক টানতে উদ্যোগের খোঁজে গ্রন্থাগারগুলি
কোলাহলের মাঝেই চলছে অখণ্ড হরিনাম— হুগলির বদনগঞ্জের কয়াপাট বাজারের মন্দিরে ৪৬ বছরের ঐতিহ্য