October 5, 2025

ভিড় বাড়ছে লাল পতাকার নিচে

সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে আবার নতুন করে লাল পতাকার মিছিল শুরু হয়েছে। খুলছে দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা দলীয় কার্যালয়গুলিও। পথে নেমে লড়াই করছেন শক্তিমোহন মালিক, ভাস্কর রায়,  অভয় ঘোষ,  অরুণ পাত্র,  মোজাম্মেল হোসেন,  পূর্ণেন্দু চ্যাটার্জী,  বংশীবদন মৈত্র, ভজহরি ভূঁইয়া  সন্দীপ সামন্ত, সুখেন্দু অধিকারী, অর্চনা মন্ডল প্রমুখ সিপিএম নেতারা। শিবপ্রসাদ মালিকের নেতৃত্বে লড়াই করছে ফরওয়ার্ড ব্লকও। তবে রাতারাতি এই ছবি তৈরি হয়নি। গত বছর দুয়েক ধরেই ধীরে ধীরে সংগঠনকে আবার চাঙ্গা করতে শুরু করেছিল বামফ্রন্ট বিশেষত সিপিএম। বিশেষ করে করোনাকালে লকডাউন পরবর্তী পরিস্থিতিতে বামেদের কর্মসূচি অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের এলাকাভিত্তিক লাগাতার আন্দোলন ধীরে ধীরে দলীয় সংগঠনকে মজবুত করেছিল।

তারপর কেন্দ্রীয় সরকার কৃষি আইন পাস করাতেই নতুন করে বামেদের আন্দোলনে হাওয়া লাগে। পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তারা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা যেন আরও বেশী করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। রূপান্তরিত হয়ে ওঠে কৃষি আইনের বিরোধিতায়। রাজনৈতিকভাবে বিজেপি বিরোধী দলগুলি বামেদের সঙ্গে একমত হতে না পারলেও কৃষি আইনের বিরোধিতা করার ছাড়া তাদেরও কিছু করার ছিল না। তাই এই একটা আইন বামেদেরকে পুনর্জীবনের অক্সিজেন জুগিয়ে দিয়ে গেছে কোন সন্দেহ নেই। এমনিতেই এই বামপন্থী দলগুলি চিরকালই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে গেছে। তাই এই আন্দোলন তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবারের লড়াইটা ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। নতুন করে শুরু হওয়া আর হেরে গিয়ে আবার ফিরে আসা এই দুই লড়াইয়ের মধ্যে অনেক তফাৎ। ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সারা রাজ্যের পাশাপাশি আরামবাগ মহকুমাতেও বামেদের অস্তিত্ব একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছেছিল। অসংখ্য নেতাকর্মী ঘরছাড়া হয়েছিলেন। তাঁদের ঘরে ফিরতেই সময় লেগেছে বছরের পর বছর। তারপর আবার সংগঠনের পতাকা হাতে রাস্তায় নামা, তাতেও কেটেছে কয়েকটা বছর। গত লোকসভা নির্বাচনের সময় নিজেদের অস্তিত্বের তাগিদেই  বিজেপির প্রচ্ছন্ন সাহায্যে বাম দলগুলো বাঁচার পথ খুঁজে পায়। তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে অনেক কর্মীই একজোট হয়ে বিজেপির ঝুলিতে ভোট দিয়েছিলেন। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে।

বিজেপি পৌঁছে গেছে একেবারে আঠারোয়। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ অন্য খেলা। আর অন্যের ঝুলিতে নয়, এবার লড়াই নিজেদের জন্য। আবার ফিরে আসার জন্য। সাম্প্রতিককালে খানাকুল, গোঘাট, আরামবাগ, পুরশুড়ায় বামেদের মিছিলগুলিতে যেভাবে লালপতাকার ভিড় বাড়ছে, যেভাবে সেই পতাকার তলায় মানুষ জড়ো হচ্ছেন তা দেখে বাম কর্মী-সমর্থকরাও আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু একক ক্ষমতা বা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে এখনই রাজ্যশাসনে আসার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবে বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে সরকার গড়তে বাম-কংগ্রেস জোট নেওয়ার জায়গায় চলে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না আগামী নির্বাচনে যদি ত্রিশঙ্কু ফলাফল হয় সেক্ষেত্রে তখন বাম-কংগ্রেস জোটের সাহায্য নেয়েই সরকার গড়তে হতে পারে তৃণমূলকে। যদিও সেই সাহায্যের প্রকৃতি কিরকম হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সেই সূত্রে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা যদি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি চলে যায় তাহলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

Loading