সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: রাজ্যজুড়ে তৃণমূল তার সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে প্রতিরোধ করতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ে নামছে এর জন্য বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় এমনকি ব্লকে ব্লকে অঞ্চলে অঞ্চলে নানারকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুয়ারে সরকার কর্মসূচির অন্তর্গত বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেও ব্যক্তিগতভাবে তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেই উদ্যোগে আরামবাগ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস যেন অনেকটাই ম্রিয়মাণ। দায়সারা গোছের কিছু আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ছাড়া বিজেপির বিরুদ্ধে জোর লড়াই দেওয়ার মত কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দল যেন মাঝসমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো অনেকটা কান্ডারীহীন নৌকার মত।
একসময় আরামবাগ ব্লক তৃণমূল মানেই একটা শক্তিশালী সংগঠনের ছবি ভেসে উঠতো। দীর্ঘদিন এই সংগঠনের ‘মাথা’ হিসেবে কাজ করেছেন তৃণমূল নেতা স্বপন নন্দী। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে অবশ্য বর্তমানে আরামবাগ শহর এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে প্রথমে ব্লকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কমল কুশারীকে। কিন্তু পিকের টিমের বিভিন্ন সমীক্ষার পর তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের প্রাক্তন যুব সভাপতি পলাশ রায়কে। কিন্তু এই দুটো পরিবর্তনেও দলের সংগঠন এতোটুকু দানা বাঁধেনি। উল্টে কর্মীদের মধ্যে যেন গাছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে। মিটিং-মিছিল, সভায় তেমনভাবে তাঁদের উৎসাহ চোখে পড়ছে না। কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করার মত ভোকাল টনিক প্রয়োগ বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না। তাই লড়াইটা সারা ব্লকজুড়ে তেমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে না। যেন অঞ্চলে অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। সংগঠিত রূপ দেখা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আরামবাগের আর এক তৃণমূল নেতা রাজেশ চৌধুরী বর্তমানে ব্লক বা শহরের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই। কিন্তু কেন নেই এর জবাব দলের জেলা নেতৃত্ব কাছেও নেই। ফলে রাজেশ চৌধুরীর মত একজন লড়াকু নেতাকে একরকম বসিয়ে দেওয়ায় সেই সংগঠন অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।
দীর্ঘদিন ধরে রাজেশ চৌধুরী আরামবাগ শহরের তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দলের যুব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সারা বিধানসভা জুড়ে তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। লড়াই ও সংগ্রামের অন্যতম সেনাপতি হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সেই লড়াইটাও হারিয়ে গেছে। তবু তৃণমূল নেতা স্বপন নন্দীর হাত ধরে আরামবাগ শহরে এখনও বেশ কিছু কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দুয়ারে সরকারকে হাতিয়ার করে সাধারণ মানুষের পাশে ছুটে যাচ্ছেন। স্বপনবাবু একদিকে সংগঠনকে শক্তিশালী করা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক রূপ তুলে ধরে আরামবাগ শহরে দলকে অনেকটাই ভালো জায়গায় নিয়ে গেছেন। বিক্ষিপ্তভাবে হলেও এই মানবিক চেহারাটা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাঝির মধ্যে। তিনি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু দলের সংগঠন যদি শক্তিশালী না হয়, দলীয় কর্মী-সমর্থকরা যদি চাঙ্গা না হয় তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আরামবাগ ব্লকে তৃণমূলের ভালো ফল করা স্বপ্নই থেকে যেতে পারে।
![]()

More Stories
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লড়াই আজও প্রাসঙ্গিক — আরামবাগের সিপিআইএমের নেতা সমীর চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতায় উঠে এল সংগঠনের বাস্তবতা
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পড়ুয়া সংকটে গোঘাটের লাইব্রেরিগুলি – পাঠক টানতে উদ্যোগের খোঁজে গ্রন্থাগারগুলি
কোলাহলের মাঝেই চলছে অখণ্ড হরিনাম— হুগলির বদনগঞ্জের কয়াপাট বাজারের মন্দিরে ৪৬ বছরের ঐতিহ্য