October 6, 2025

নিজের মায়ের পরিচয়ে অসুস্থ বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তৃণমূল নেতা

সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: অসুস্থ বৃদ্ধাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের মায়ের পরিচয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তৃণমূল নেতা। তৃণমূল নেতার এই মানবিক প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষজন। ওই তৃণমূল নেতার নাম সৈয়দ মকবুল হোসেন। তিনি গোঘাট দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। অসুস্থ ওই বৃদ্ধার নাম রমা মুখার্জি। একসময় তিনি কলকাতার নামী দামী অপেরাতে দাপিয়ে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীকালে কামারপুকুরের বিভিন্ন যাত্রাদলেও অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ব্রাহ্মণ পরিবারের এক বৃদ্ধার জন্য মকবুল হোসেনের এই প্রয়াস সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজিরও বটে। রমাদেবীর বাপের বাড়ি হুগলির হরিপাল থানার গোপীনগর এলাকায়। বাবা বিভূতি ভুষণ ঘোষের হাত ধরে তিনি কলকাতার চিৎপুরে যাত্রাদলে অভিনয়ের কাজ শুরু করেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় পঞ্চানন মুখার্জির। পরবর্তী সময়ে তাঁকে ভালবেসে বিয়ে করে চলে আসেন গোঘাটের রঘুবাটী গ্রাম পঞ্চায়েতের খাটগ্রামে। নিজের উপার্জনের টাকায় সেখানে স্বামীর নামে একটি একতলা পাকা বাড়িও তৈরি করেন। পরে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজের সঞ্চিত সমস্ত টাকা খরচ করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। বছর চারেক আগে পঞ্চননবাবুর মৃত্যু হয়। তিনি জানিয়েছেন, তারপরেই পঞ্চাননবাবুর প্রথম পক্ষের ছেলেরা ওই বাড়ি বিক্রি করে দেন। বৈধ কাগজপত্রের অভাবে ওই বাড়ির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয় নিঃসন্তান রমাদেবিকে। তারপর থেকেই কামারপুকুর চটি এলাকায় তিনি একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। স্বামীর চিকিৎসার জন্য সমস্ত অর্থ নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই ভিক্ষাবৃত্তি করেই তাঁর জীবন কাটছিল। অনেকেই তাঁর পরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। স্থানীয় ব্যবসাদারদের কাছ থেকে এক বৃদ্ধার অসুস্থতার খবর পান কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মকবুল হোসেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁকে উদ্ধার করে কামারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসকরা ওই বৃদ্ধার পরিচয় জানতে চাইলে মকবুল সাহেব নিজের পরিচয় পত্র জমা দিয়ে তাঁকে ভর্তি করান। মকবুল সাহেব বলেন, হাসপাতাল থেকে যখন ওই বৃদ্ধার পরিচয় জানতে চাইছিলেন তখন আমি নিজে থেকেই বলি, ধরে নিন উনি আমার মা। আমার মা হিসেবেই ওনাকে ভর্তি করুন। আমার পরিচয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওনাকে ভর্তি করে নেন।  চিকিৎসার পর অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন রমাদেবী। এরপরেই তিনি তাঁর সমস্ত কাহিনি খুলে বলেন মকবুল হোসেনকে। তিনি কলকাতার কোহিনুর অপেরা সহ বহু  অপেরাতে নামিদামি নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন‌। এখন বয়সের কারণে তার বেশিরভাগই মনে করতে পারছেন না। আর তা জানতে পেরে স্তম্ভিত হয়ে যান মকবুল হোসেন। এরপরই মকবুল সাহেব আরামবাগ পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে আরামবাগ ভবঘুরে ভবনে রমাদেবীর থাকার ব্যবস্থা করছেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মকবুল হোসেন বলেন, ওনাকে যখন রাস্তা থেকে তুলে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি তখন উনি যে এত বড় যাত্রাশিল্পী তা জানতাম না।  কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তিনি সে কথা আমাদের জানিয়েছেন। উনি যাতে আরামবাগ ভবঘুরে ভবনে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা করছি। অন্যদিকে রমাদেবী বলেন, মুকবুল ভাই আমার জন্য যা করেছে তার জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ওর জন্যই আমি আবার সুস্থ হয়ে উঠেছি।

Loading