October 5, 2025

আর থাকবে না ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল? মোদি সরকারের দিকে তাকিয়ে বাংলা ও বাঙালি


সোমালিয়া সংবাদ, কলকাতা: কলকাতা তথা বাংলার অন্যতম একটা প্রধান আকর্ষণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামে তৈরি এই স্মৃতিসৌধ বর্তমানে একটি জাতীয় প্রদর্শনীশালা জাদুঘর। বেলফাস্ট সিটি হলের স্থাপত্য শিল্পের অনুকরনে এটির নকশা তৈরি করেছিলেন স্যার উইলিয়াম এমারসন। এর স্থপতি ছিলেন ভিনসেন্ট এচ। সৌধ সংলগ্ন বাগানটির নকশা তৈরি করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও জন প্রেইন। নির্মাণ কাজ করেছিল কলকাতার মার্টিন এন্ড কোম্পানি। এবার এই বিখ্যাত ও জনপ্রিয় স্মৃতিসৌধটির নাম বদলে যেতে পারে। এমনই সুপারিশ করেছে দেশের বিভিন্ন স্তরের বিখ্যাত ৮৫ জন মানুষকে নিয়ে তৈরি নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটি। তাঁরা নাকি জানিয়েছেন, নেতাজির ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এটির নাম নেতাজির নামে করা হবে। কমিটির কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর নামে করার। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। 

যদিও বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একাংশ এই নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে, যেহেতু ওটা মহারানী ভিক্টোরিয়ার নামেই তৈরি এবং তাঁকে উদ্দেশ্য করেই সৌধ তাই ওই মেমোরিয়ালের নাম নেতাজির নামে রাখাটা ঠিক হবে না। তার থেকে বরং নেতাজির নামে প্রয়োজনে অন্য একটি মেমোরিয়াল তৈরি করা হোক। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারও একই মত প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়ার মেমোরিয়ালের সঙ্গে নেতাজির কোন সম্পর্ক ছিল না। তাই ঐতিহাসিক এই সৌধের নাম বদলে দেওয়া সঠিক হবে না। তবে সাহিত্যিক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে একটু আলোচনা হলে ভাল ভাল হত। কারণ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল একটা ঔপনিবেশিকতাবাদের  ধারক ও বাহক। অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের মতে, নেতাজির মতো বড় মাপের মানুষ আমাদের দেশে খুব কমই রয়েছেন। তাই যে কোন জায়গার নাম তাঁর নামে যদি রাখা হয় সেটা খুবই আনন্দের। কারণ নেতাজি শুধু বাঙালি কেন গোটা ভারতবাসীর কাছে একটা ভাল লাগার জায়গা।

 উল্লেখ্য, শুধু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নয়, এর আগে হাওড়া-কালকা মেলের নাম পরিবর্তন করেছে ভারতীয় রেল। ঐতিহাসিক এই ট্রেনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নেতাজি এক্সপ্রেস’। কারণ ১৯৪১ সালে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে নেতাজি এই কালকা মেলে চেপেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তৎকালীন বিহারের গোমো স্টেশন থেকে তিনি কালকা মেলে উঠেছিলেন। গোমো স্টেশনটি বর্তমানে ঝাড়খন্ডে। নেতাজির অন্তর্ধানের কথা মাথায় রেখেই এই ট্রেনের নতুন নামকরণ করা হয়েছে নেতাজি এক্সপ্রেস। যেহেতু নেতাজির সঙ্গে এই কালকা মেলের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে তাই এই নাম পরিবর্তন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কিন্তু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ক্ষেত্রে সেটা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এখন দেখার এ ব্যাপারে নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটি কী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

Loading