October 5, 2025

শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি: প্রশ্নটা নৈতিকতার

বিশেষ প্রতিবেদন: সংবাদের শিরোনামে প্রায়ই এমন কিছু ঘটনা দেখা যায় যা দেখে আমরা চমকে উঠি, প্রশ্ন তুলি বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের নৈতিকতা নিয়ে, সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে। শিউরে ওঠে গা, প্রতিবাদে গর্জে উঠতে চাই ভিতরের মন, ধিক্কার জানাই অমানবিক ছেলে-মেয়েদের। বাবা-মা ও গুরুজনদের প্রতি অকৃতজ্ঞ আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলি। ভাবি, বর্তমান প্রজন্মের কাছে কিভাবে নৈতিকতা হারিয়ে গেল। কিন্তু একবারও ভাবি না এর জন্য দায়ী কারা। এর জন্য দায়ী কি আমরা নিজেরাই দায়ী নই? এই যে বর্তমানে স্কুল-শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি পড়া নিয়ে যা চলছে তার জন্য আমরা বাবা-মায়েরা, অভিভাবক-অভিভাবকেরা নিজেদের সন্তানদেরকে কি সেই অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি না? সরকারি নির্দেশিকা না মেনে টিউশনি পড়ানো স্কুল-শিক্ষকদের কথা বাদ দিন। কিন্তু আমরা বাবা-মায়েরা, অভিভাবক-অভিভাবিকারা কি আদৌ নিজেদের সন্তানদেরকে সঠিক পথে চালিত করছি? তাদেরকে কি আগামী দিনে এক একজন নীতিহীন, আইন লঙ্ঘনকারী নাগরিক হিসেবে তৈরি করছি না? আরও কঠোরভাবে বলতে গেলে আমরা কি আমাদের সন্তানদেরকে অপরাধ জগতের পাঠ দিচ্ছি না? অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের মনে কি অপরাধের বীজ ঢুকিয়ে দিচ্ছি না? স্কুল-শিক্ষকের প্রাইভেট টিউশন পড়ানো নিয়ে কিছু অভিভাবক যেভাবে সরকারি নির্দেশিকার বিরোধিতা করে ওই সমস্ত টিউশন পড়ানো শিক্ষকের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাতেই এই প্রশ্ন উঠছে। ওই সমস্ত অভিভাবক তাঁদের সন্তানদেরকে শেখাচ্ছেন ‘আইন ভাঙা যায়’, ‘মিথ্যা কথা বলা যায়’ ‘ অন্যায় করা যায়’, ‘অপরাধ করা যায়’। কোন কোন অভিভাবক প্রশ্ন তুলবেন, এতে অপরাধটা কোথায়? যদি অপরাধ না হয় তাহলে কেন ঐ সমস্ত স্কুল শিক্ষক প্রকাশ্যে টিউশন পড়াতে ভয় পাচ্ছেন? ওই  সমস্ত শিক্ষকদের ভয়ই বলে দিচ্ছে তাঁরা অপরাধী। নাহলে কেন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়াচ্ছেন? কেন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অনেক কিছু গোপন রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন? কেন সরকারি প্রতিনিধি বা সংবাদ মাধ্যম গেলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আড়ালে লুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে? কেন ছাত্র-ছাত্রীদের জুতোগুলো পর্যন্ত লুকিয়ে রাখা হচ্ছে? কেনই বা কোন কোন শিক্ষক ভিতরের ঘরে বা তিনতলার গোপন ঘরে পড়াচ্ছেন? অর্থাৎ ওই সমস্ত শিক্ষকদের কাছে টিউশন পড়তে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাও বুঝতে পারছে তারাও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারাও অপরাধ করছে। আর সেই অপরাধ করতে তাদেরকে প্ররোচিত করছে তাদের বাবা-মা ও অভিভাবকরাই। তাদের রক্তে রোপিত হয়ে যাচ্ছে অপরাধের বীজ। পরবর্তীকালে ওই ছেলে-মেয়েরা যখন চুরি-ডাকাতি বা অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে যুক্ত হবে তখন ওই সমস্ত বাবা-মায়েদের আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। ওই সমস্ত ছেলে-মেয়েরা যদি বাবা-মায়েদেরকে বৃদ্ধ বয়সে রেলস্টেশন, ফুটপাতে ফেলে দিয়ে আসে বা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে তাহলে কিন্তু আশ্চর্য হবেন না। কারণ ছাত্রাবস্থা থেকেই তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যায়, মিথ্যাচার, অপরাধ। এই দিকটা কি কোন বাবা-মা বা অভিভাবকরা ভেবেছেন? আপনারা কি আপনাদেরর সন্তানদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করছেন? একা একা বসে নিজের বিবেককে সেই প্রশ্নটা করুন। টিউশন পড়ানো স্কুল-শিক্ষকরা তাঁদের ব্যবসার জন্য অন্যরকম বোঝাবেন এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু বাবা-মায়েরা কেন সেই প্ররোচনায় পা দেবেন? প্রশ্নটা সেখানেই। প্রশ্নটা নৈতিকতার, সন্তানের ভবিষ্যতের। সন্তানকে মানুষের মতো ‘মানুষ’ হিসেবে গড়ে তোলার। নাহলে আগামী দিনে আপনাদের বৃদ্ধ বয়সে নিজেদেরই সন্তানদের কাছ থেকে সেই ভয়ংকর দিনটা দেখার জন্য তৈরি থাকুন।

Loading