October 5, 2025

দু’দিন ধরে তালাবন্দী বৃদ্ধা, তালা ভেঙে উদ্ধার  পুলিশের

সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: বাড়ির মধ্যে ৯২ বছরের বৃদ্ধা। অশক্ত, অসমর্থ্য, কথাবার্তাও অসংলগ্ন। আর বাইরের দরজায় তালা ঝোলানো। শনিবার থেকেই এই ছবি দেখছিলেন প্রতিবেশীরা, ছেলে-বৌমা কেউ বাড়িতে নেই। সোমবার হঠাৎই আরামবাগ থানায় ফোন যায়। নাম-ঠিকানা গোপন রেখে ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে পুলিশকে পুরো বিষয়টি জানান তিনি। তড়িঘড়ি ওই বাড়িতে ছুটে যায় আরামবাগ থানার পুলিশ। প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তারা। ঘটনাটি ঘটেছে আরামবাগ পুরসভার আজাদ পল্লীতে। জানা গেছে, ওই বৃদ্ধার নাম গীতারানী বসু। তাঁর ছেলে চন্দন বসু আরামবাগের পাড়াবাগনান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। প্রতিবেশীরা জানান, মাঝে মাঝেই ওই ছেলে-বৌমা এরকম করে থাকেন। তাই তাঁরা সবসময় আশঙ্কায় থাকেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে যায়। ওই বৃদ্ধা কি খাচ্ছেন, কেমনভাবে আছেন তাই ভেবে তাঁদের অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। এরপর খবর পেয়ে আরামবাগ থানার পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে জানালা দিয়ে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি কিছুটা অসংলগ্ন কথা বলছিলেন।  কোন কিছু খেতে বা নিতে অস্বীকার করেন। উল্টে নিজের ছেলের প্রশংসাও করেন। বাধ্য হয়ে পুলিশ শাবল দিয়ে তালা ভেঙে তাঁর কাছে পৌঁছান। ওই সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন পাশের পল্লীতে থাকা আত্মীয়রা। এরপর পুলিশ তাঁদের হাতেই ওই  বৃদ্ধাকে তুলে দেন এবং ছেলে না ফেরা পর্যন্ত সবরকম দেখভালের দায়িত্ব দেন। কোন কিছু অসুবিধা হলে পুলিশকে জানানোর কথা বলেন। এরপর পুলিশের গাড়িতেই গীতাদেবীকে আত্মীয়র বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ফোনে ছেলে চন্দন বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি কলকাতায় আছি। আমার মেয়ের ‘আকাশ’-এ ট্রেনিং চলছে। শনিবার আমি আরামবাগ থেকে গেছি। রবিবারই ফিরে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়ের হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমি ফিরতে পারিনি। আজই বাড়ি ফিরছি। তিনি আরও বলেন, মা চাবিতালা  দিতে পারে না। ভিতরের ঘর সব খোলা রাখা আছে। আমি তাই পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে থেকে চাবি দিয়ে এসেছি। বাড়িতে জল, মিষ্টি, ওষুধপত্র সবকিছুই রেখে এসেছি। প্রতিবেশী শেখ জিয়াউর রহমান বলেন, পুলিশ যাওয়ার খবর শুনে বৃদ্ধার ছেলে চন্দনবাবু আমাকে ফোন করেছিলেন। ওনাদের বাড়িতে যেতে বললেন। তাই ওনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি তাঁকে বললাম, মাকে চাবি দিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি। অন্তত আমাকে বলে যেতে পারতেন। তাহলে অন্তত আমরা প্রত্যেকদিন এসে খোঁজখবর নিতে পারতাম। অন্যান্য প্রতিবেশীরা ছেলে-বৌমার এই কান্ডকে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা  সকলেই এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

Loading