সোমালিয়া সংবাদ, পুরশুড়া: হিমঘরে সংরক্ষিত আলুর দাম একেবারে তলানিতে। আর তাতেই ঘুম ছুটেছে আলু ব্যবসায়ীদের। স্বস্তিতে নেই আলু চাষিরাও। কারণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক চাষিও ভাল লাভের আশায় হিমঘরে আলু জমা রেখেছিলেন। তাই তাঁরাও পড়েছেন মহাসংকটে। কিভাবে এই অবস্থা থেকে রেহাই মিলবে কেউই বুঝতে পারছেন না। রাজ্যের যে কটি জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল হুগলি। এই জেলার পুরশুড়া ও তার আশেপাশের ব্লকগুলিতে ব্যাপক হারে প্রতিবছর আলুর চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বছর হুগলি জেলাতে প্রায় ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। যদিও বৃষ্টির জন্য এবছর সেই উৎপাদন এই জেলায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। মাঠে আলু ওঠার সময় এ বছর আলুর বেশ ভালই দাম উঠেছিল। ৫০ কেজি বস্তা ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ব্যবসাদারদের পাশাপাশি চাষিরাও সেই আলু হিমঘরে জমা রেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই আলুর প্যাকেট প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। অর্থাৎ উৎপাদনের সময়ের দামের তুলনায় তিন ভাগের একভাগ মাত্র। ফলে যাঁরা চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে হিমঘরে জমা রেখেছিলেন তাঁদের কেনা দামের তিন ভাগের দু’ভাগ ক্ষতি। পাশাপাশি যাঁরা চাষের আলু নিজেরাই জমা রেখেছিলেন তাঁদেরও উৎপাদন খরচটুকু উঠবে না। এদিকে যাঁরা পুরনো আলু বিক্রি করে নতুন আলু বসান তাঁরাও পড়েছেন মহাফাঁপড়ে। কারণ এক প্যাকেট বীজ আলু কিনতে হলে ২০০০-৩৫০০ টাকা দাম পড়ছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারেরও দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে। এদিকে চাষি বা ব্যবসায়ী কেউই আলু বের করে বিক্রি করার জন্য হিমঘরমুখী না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন হিমঘর মালিকেরাও। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখার্জি জানান, এবার রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ৬৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে রবিবার পর্যন্ত এখনও প্রায় ৩০-৩১ শতাংশ আলু হিমঘরে জমা রয়েছে। এদিকে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী হিমঘর থেকে সমস্ত আলু বের করে নেওয়ার সময়সীমা নভেম্বর মাস। লালু মুখার্জির মতে, ওই বিপুল পরিমাণ আলু হিমঘরের বাইরে শেডে বের করে রাখা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্নার কাছে হিমঘরের একই ভাড়ায় আরও একমাস ওই আলু হিমঘরে জমা রাখার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে লালু মুখার্জি আরও জানান, এই মুহূর্তে ভিন রাজ্যে বাংলার আলু যাচ্ছে না। এদিকে ডিসেম্বর মাসেই বাজারে নতুন কাঁচা আলু আমদানি হবে। ফলে আলুর দামে আরও পতন ঘটার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুরশুড়ার আলু ব্যবসায়ী ঘন্টেশ্বর বেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যবসাদাররাও ক্ষতির মুখে, আবার চাষিরাও ক্ষতির মুখে। এই মুহূর্তে আশার কোন আলোই দেখা যাচ্ছে না। পুরশুড়ার জঙ্গলপাড়ার ব্যবসায়ী বৈদ্যনাথ মান্না এ বছর ৩০০ প্যাকেট আলু রেখেছিলেন। তিনি জানালেন, প্যাকেট প্রতি তাঁর ৫০০ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। তাই অনেকেই আলু বের করতে চাইছেন না। শেষ পর্যন্ত হয়তো হিমঘর মালিককে নিলাম করতে হবে।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক