সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: এবার শীতে পর্যটক ও বনভোজনকারীদের অন্যতম বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে চলেছে গোঘাটের গড় মান্দারন পর্যটন কেন্দ্র। কলকাতা থেকে ১১০ কিমি দূরে আমোদর নদ ঘেরা এই প্রাচীন গড় দেখতে প্রতিবছরই অসংখ্য পর্যটক ভিড় করেন। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝ পর্যন্ত এখানে পর্যটকদের মেলা বসে যায়। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুর এবং ১০ কিমি দূরে মা সারদাদেবীর জন্মস্থান জয়রামবাটি থাকায় এই পর্যটন কেন্দ্রের বাড়তি একটা আকর্ষণ রয়েছে। কামারপুকুর থেকে মেদিনীপুর যাওয়ার রাস্তায় দু’কিমি এগিয়ে প্রধান সড়কের পাশেই প্রবেশদ্বার। তবে গড়ে পৌঁছাতে হলে আরও এক-দেড় কিমি মোরাম বিছানা পথে হেঁটে যেতে হবে। সামনেই রয়েছে গাজী ও পীরের দরগা। যা এলাকার মানুষের কাছে ‘বড় আস্তানা’ নামে পরিচিত। আদপে এটি গৌড়ের অধিপতি হোসেন শাহের সেনাপতি ইসমাইল গাজীর পাথরের সমাধি বেদি যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নিদর্শন। এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষই শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন। হিন্দুরা ধর্মঠাকুরের ঘোড়া দেন, আর মুসলমানরা বাতি জালান সমাধিতে। গড়ের এক পাশে রয়েছে কাজলা দিদি আর লক্ষ্মীজলা। শীতে এখানে পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে। একদিকে রয়েছে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব। অন্যদিকে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দুর্গেশনন্দিনী’র পটভূমিকা হল এই গড় মান্দারন। তাই ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হুগলি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ডিয়ার পার্ক, পিকক কর্নার সহ নানাভাবে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর বেশ কয়েকবার এই পর্যটন কেন্দ্রকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর বিধায়ক মানস মজুমদারের তৎপরতায় পুনরায় এটি সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। হুগলি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে একটি কমিটি গড়ে নতুন করে সৌন্দর্যায়ন শুরু হয়েছে। ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ব্যয়ে প্রথম পর্যায়ের কাজ বর্তমানে প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যেই পর্যটকদের রাত্রিবাসের জন্য চারটি কটেজ তৈরির কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। বসানো হয়েছে তিনটি হাইমাস্ট লাইট, লক্ষ্মীজলার উপরে সুদৃশ্য কাঠের সেতু তৈরি করা হয়েছে, পর্যটকদের জন্য ছাউনি নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। এখন যেসব কাজ চলছে তার মধ্যে রয়েছে গড় মান্দারন কেন্দ্রের মূল ফটক থেকে গড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, আরও কয়েকটি হাইমাস্ট লাইট বসানো, পর্যটন কেন্দ্রের সাউন্ড সিস্টেম তৈরি করা, মূল ফটক, টিকিট কাউন্টার, অফিস ঘর সংস্কার। প্রায় ২০০ একর জুড়ে থাকা এই পর্যটন কেন্দ্র বনভোজনকারীদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা। তাই এই শীতের মরসুমেই তাদের কাছে আকর্ষণীয় ভাবে হাজির করার উদ্যোগ চলছে হুগলি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে হুগলি জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান জানান, এবার শীতে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠবে এই গড় মান্দারণ। ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি কাজগুলো শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরে ধাপে ধাপে রোপওয়ে, জীববৈচিত্র্য পার্ক ইত্যাদি নানান প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে।
More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি