সোমালিয়া সংবাদ, আরামবাগ: বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। সামনের ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিল মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা। আর তাই এখন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নিজেদের ঘর গোছানোর পালা। ইতিমধ্যেই রাজ্যজুড়ে শাসক দল তৃণমূল এবং প্রধান বিরোধীদল বিজেপি নানারকম কর্মসূচি করে চলেছে। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদিকে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা একের পর এক কর্মসূচি করে চলেছেন। পঞ্চায়েতের মতো আঞ্চলিক নির্বাচনগুলিতে শাসক দল অনেকটাই সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু এবার যাতে সেই সুবিধা শাসকদলের পক্ষে না যায় সেজন্য প্রথম থেকেই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। বাস্তবে ঘটনায় যাই হোক না কেন, প্রচারে ও কথাবার্তায় কেউ কম যাচ্ছে না। একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে। কিন্তু সামনেই যে পঞ্চায়েত নির্বাচন তা কিন্তু উপলব্ধি করতে পারছেন না আরামবাগ মহকুমার মানুষজন। কারণ এখানে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়মিত কর্মসূচি থাকলেও প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে তেমনভাবে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে না। তাদের কর্মসূচিও তেমনভাবে নজর কাটতে পারছে না। অথচ এই মহকুমার চারটি বিধানসভাই বিজেপির দখলে। তা সত্ত্বেও খানাকুল বিধানসভা বাদ দিলে বাকি তিনটিতে বিজেপির কর্মসূচি তেমনভাবে বলার নয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গোঘাটে। সেখানে সাওড়া- নকুণ্ডা অঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের নেতৃত্বে কোন কর্মসূচি শেষ কবে দেখা গিয়েছে তা নিয়ে দলের কার্যকর্তারাই বলতে পারছেন না। আরামবাগ বিধানসভাতেও প্রায় একই অবস্থা। প্রধান বিরোধী দলের বিধায়ক থাকলে যেরকম কর্মসূচি হওয়া উচিত তার নামমাত্র হচ্ছে না বলে দলেরই কার্যকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার ওপর দলের মধ্যেই একাধিক গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। মাঝে মাঝে দু-একটা কর্মসূচি হলেও তাতে এক গোষ্ঠীর নেতারা উপস্থিত তো অন্য গোষ্ঠীর নেতারা অনুপস্থিত। বর্তমানে পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ। তিনি দীর্ঘদিন আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতিত্ব করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই আরামবাগ মহকুমার চারটি আসন বিজেপি দখল করতে পেরেছে। কিন্তু বর্তমানে তিনি রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ফলে পুরশুড়া ছাড়াও তাঁকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যেতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর নিজের এলাকা পুরশুড়া বিধানসভায় দলের কর্মসূচির সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। যদিও এসবের মধ্যেই নিজের এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন খানাকুলের তরুণ বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। তবুও সুসংগঠিত আন্দোলন বলতে যা বোঝায় এই মহকুমায় বিজেপির মধ্যে তা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সাংগঠনিক দিক দিয়ে বর্তমানে যতই দুর্বল হোক না কেন সিপিএমের সাংগঠনিক ভিত্তি এখনও অনেকটাই সুসংহত। তাই সিপিএম নেতা-কর্মীরা অঞ্চল ধরে ধরে নিয়মিত প্রচারে নামছেন। একের পর এক কর্মসূচি সামনে এনে তাঁরা গ্রামে গ্রামে মিছিল ও পথসভা করছেন। তাঁরা যে ফুরিয়ে যাননি তা আবারও প্রমাণ দিচ্ছেন। ফলে দলের যে সমস্ত সদস্যরা কিছুটা আতঙ্কে কিছুটা আত্মরক্ষার জন্য বিজেপির ছাতার তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরাও আবার লাল পতাকার নিচে ভিড় করছেন। স্বাভাবিকভাবেই দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে সিপিএম। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন সিপিএম বহু আসনে প্রার্থী দিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। সেই ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন দলীয় সংগঠনকে যে মজবুত করা যাবে এটা সিপিএম নেতৃত্ব ভালই বুঝেছেন। তাই তাঁরা আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য নিজেদের শক্তি পরীক্ষা করতে পঞ্চায়েত নির্বাচনকেই লক্ষ্য করেছেন। আর তা যদি সত্য হয় তাহলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগ আসনে এবারও বিজেপির অধরা থেকে যাবে। কারণ গত লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের একটা বড় অংশ বিজেপিতে ভোট দিয়েছিল। এবার তারা যদি নিজেদের প্রার্থীকে ভোট দেয় তাহলে বিজেপির লড়াই আরও কঠিন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের মার্জিন অনেকটাই বেড়ে যাবে কোন সন্দেহ নেই ।
More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি