October 5, 2025

পৌষালী ধান‍্যোৎসবে মাতোয়ারা গ্রাম

 সোমালিয়া সংবাদ, পুরশুড়া: পুরনো সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে রবিবার মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ‘পৌষালী ধান‍্য উৎসব’-এ মেতে উঠলেন পুরশুড়ার কৃষ্ণবাটি গ্রামের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে আশেপাশে গ্রামের মানুষও এই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। এদিন সকাল থেকেই গ্রামের অসংখ্য মানুষ মহিলা-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, ছেলে-বুড়ো সকলেই একসঙ্গে সারিবদ্ধ ভাবে শঙ্খ ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে গান গাইতে গাইতে জমি থেকে পালকিতে করে গ্রামের খামারে ধান নিয়ে আসেন। টুসু সাজে ছোট মেয়ে থেকে শুরু করে পালকি ও ধানের গোলা সবকিছুই শোভা পায় ওই শোভাযাত্রায়। এরপর সারাদিন নাচ, গান, কবিতা, লোকগান ইত্যাদির আয়োজনে পুরনো দিনের পরিবেশকে ফিরিয়ে আনে। তবে এর জন্য প্রস্তুতি চলে দু-তিন মাস আগে থেকেই। তখন থেকেই গ্রামের উৎসাহী মানুষজন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে গ্রামের অন্যান্যদের সঙ্গে উৎসব নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলকেই গান শেখানো, কে কি ভূমিকা পালন করবে, কে আলপনা দেবে, কে মড়াই তৈরি করবে সেইসব নিয়ে চলে আলোচনা। এক কথায় ওই মাস দুই দিন আগে থেকেই যেন উৎসবে সূচনা হয়ে যায়। আর উৎসবের কয়েকদিন আগে থেকে সেই প্রস্তুতি চরমে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চাল সংগ্রহ, কাঁচা আনাজ যোগাড় করা বা কিনে আনা, সেই আনাজ সারারাত ধরে কাটা এইসবেও আনন্দের সীমা থাকে না। এদিন সকাল থেকেই  ধান সাজানো, আলপনা দেওয়ার কাজে হাত লাগান বাড়ির মেয়েরা। তারপর মাঠ থেকে ধান নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে খামারে ধান তোলার পর অন্যান্য অনুষ্ঠান শুরু হয়। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে পুরশুড়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন বিধায়ক বিষ্ণুপদ বেরা এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সেই থেকে গ্রামের মানুষ ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব পালন করে আসছেন। আর এই উৎসবকে সফল করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন গণনাট্য সংঘের কর্মী ও কর্মকর্তারা।  শ্যামলী আদক, সুমনা গুছাইত প্রমুখ  গৃহবধূরা জানালেন, এই উৎসবের আনন্দ কোনোভাবেই পরিমাপ করা যায় না। এটা আমাদের প্রাণের উৎসব, এটা আমাদের হৃদয়ের উৎসব। এর সঙ্গে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির প্রত্যেক মানুষ সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। এই উৎসবের খবর পেয়ে এদিন এই উৎসব দেখতে রিষড়া থেকে হাজির হয়েছিলেন সুব্রত সিংহ। তিনি বলেন, যা দেখলাম তা সারা জীবনেও ভুলব না। এই উৎসব শুধু হৃদয়ে সঞ্চয় করে নিয়ে যাচ্ছি তাই নয়, বাকি মানুষদের কাছে গিয়ে গল্প করে তাঁদের সঙ্গেও এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চাই। এই উৎসবের প্রথম দিক থেকেই এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা শান্তশ্রী বেরা। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ প্রত্যেকেই বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকেন। কিন্তু এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সকলেই যেন নিজেদের অজান্তে শিল্পী হয়ে ওঠেন।

Loading