‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যেরে
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে দেশ বিদেশে,
আমি দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে।
কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যেরে।’

তবে ‘আন্তর্জাতিক গোঁসাই পরব’-এ এলে মনের মানুষ না পাওয়া গেলেও মনের রসদ যে মিলবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
পল্লীবাংলার সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু গেছে ‘আন্তর্জাতিক গোঁসাই পরব’। ‘গোঁসাই পরব কালচারাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-র উদ্যোগে আরামবাগ শহর সংলগ্ন তেঘরিতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য বাউল-ফকির পাঁচদিনের এই উৎসবে ভিড় জমিয়েছেন। উপস্থিত থাকছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট বাউল শিল্পী টুনটুন ফকির, কোহিনুর আখতার গোলাপি, জাপানের মাকি কাজুমি, কাজুমি ফোকাজোয়া, কানকো সিমুজি, বাঁকুড়ার পূর্ণদাস বাউল, আরামবাগের অনন্ত দাস বাউল, জয়দেব-কেন্দুলির অনাথবন্ধু ঘোষ, অসমের মহামায়া বাউলের মত গুণী শিল্পীরা। সেই সঙ্গে শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের হাটের পাশাপাশি রয়েছে হস্তশিল্প মেলা ‘সোনাঝুড়ি হাট’ এখানে প্রায় ৭০ জন হস্তশিল্পী নিজেরাই উপস্থিত থেকে তাঁদের সৃষ্টি সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। মেলা প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে তুলতে প্রায় পঞ্চাশ জন শিল্পী দিনরাত পরিশ্রম করে বাউলদের আখড়া তৈরিতে হাত লাগিয়েছিলেন। সারা মাঠ জুড়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছবি। রয়েছে মিথিলার জ্যামিতিক শৈলির আলপনা। ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন ঐতিহ্য। মেলায় প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন এটা বাংলার কোন গ্রাম। এখানে লোকশিল্পীরা তাঁদের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে হাজির রয়েছেন। গাছের গুঁড়ি আর শালপাতা দিয়ে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। আর মাঠজুড়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে ভারতীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মডেল ও ছবি। সেগুলোকে জীবন্ত করতে মৃৎশিল্পীরা দিনরাত প্রাণপাত করেছেন। একতারা, দোতারা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চারটি ফটক। মূলমঞ্চ ছাড়াও আরও তিনটি মঞ্চে বিভিন্ন শিল্পী অনুষ্ঠানে হাজির থাকছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এবং লালন ফকিরকে একসুতোয় জুড়ে সারা শহরে এক পদযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সূচনা হয়ে গেল। পরে মূলমঞ্চে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন মনের মানুষরা। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে আখড়া ও মেলা প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে। মেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ অশোক কুমার নন্দী বলেন, এই উৎসব প্রাণের উৎসব। বিভিন্ন দেশের বাউল-ফকিররা এখানে মিলনের গান গাইবেন। আমরা মানুষের মধ্যেকার বিভেদ সরিয়ে মিলনের মঞ্চ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। তাকে সার্থক রূপ দিতেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা কমিটির সম্পাদক শান্তনু রায় বলেন, মূলত বাউল ও বাউল গান নিয়েই আমাদের এই পরব। তাঁদের সহজ সরল জীবন যাপন কত সুন্দরভাবে সুরের মাধ্যমে উঠে এসেছে তা তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশা করি সমস্ত মানুষই তাঁদের জীবন খুঁজে পাবেন। মেলা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সন্দীপ রায় বলেন, এই মেলা আর পাঁচটা মেলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে এলে মানুষ তার প্রাণের রস খুঁজে পাবে। দেখা মিলবে বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির। ভরে উঠবে মন প্রাণ। এক কথায় এই মেলা হল গ্রাম বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির বাস্তব উপস্থাপন।

More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি