October 6, 2025

বাইরে থেকে নেতা , পরামর্শদাতা ও আদর্শ আমদানি: বাংলার রাজনীতির দেউলিয়াপনা

বাঙালির দুটি আসক্তি আছে। হয়তো বা বাঙালি নিজেও জানে না। বিশেষভাবে মধ্যবিত্ত বাঙালি । এই আসক্তির প্রথমটি হল সংবাদপত্র। দ্বিতীয়টি হল দু’বেলা চায়ের দোকানে আড্ডা। চায়ের দোকানের আড্ডায় মূলত রাজনৈতিক আলোচনাই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। নিজেরা সক্রিয় রাজনীতি না করলেও চায়ের কাপে তুফান তুলে রাজা-উজির মারায় ওস্তাদ বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের একটা বড় অংশ। রাজা উজির মারার অর্থে, নিজেদের মতো করে ভোটের পর্যালোচনা করে সরকার গঠন করে। নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা পেশ করে। অথচ এদের কথা কোথাও গুরুত্ব পায় না। আড্ডা শেষে একে অপরের প্রতিপক্ষকে নিয়ে সবাই একমত হয়ে বাড়ির রাস্তা ধরে….. আমরা যতই গলা ফাটাই না কেন কোন রাজনৈতিক দলই ভাল কিছু করবে না। সবাই সমান।  চায়ের দোকানে চায়ের কাপে তুফান তুলে তুমুল আলোচনারই ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি কিস্তি——-
আমরা বাঙালিরা খুব গর্ব করে বলি বাঙালি আজ যা ভাবে ভারতবর্ষ ভাবে আগামীকাল। ২০২১ সালের প্রথম দিকে দাঁড়িয়ে আমরা  কি গর্ব করে এই কথা বলতে পারছি? যেন মনে হচ্ছে বাঙালি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। একটু পরিস্কার ভাষায় বললে বোঝা  সহজ হবে। বাংলায় কি এই মুহূর্তে রাজনীতিবিদ নেই ? বর্তমান বাংলায় মূলত তিনটি দল একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম-কংগ্রেস জোট। আরোষও একটি দল আছে। আব্বাসউদ্দিন সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। এই চতুর্থ দলটির অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয় এবং  বাংলার রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটাও স্পষ্ট নয়। ঠিক একই রকমভাবে বাংলার রাজনীতি এখন একেবারে ঘোলা জলের মতো। কোথায় কি আছে তা বোঝা যাচ্ছে না। দলবদলের হিড়িক পড়েছে। কোথায় গিয়ে শেষ হবে কারও জানা নেই। দলবদলের প্রভাবে কোন্ দল কতটা সুফল পাবে বা লাভবান হবে, বা কোন্ দল কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কেউই জানে না। তবে বাংলার রাজনীতির জল যে ঘোলা হয়েছে তা তৃণমূলের ভাড়া করা ভোটকুশলী  অর্থাৎ প্রশান্ত কিশোরের জন্য। যিনি আদতে বিহারের বাসিন্দা। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু বাংলা কি এখন রাজনীতিবিদহীন? বাংলার রাজনীতি কি এখন শুধুমাত্র নেতা-নেত্রী নির্ভর? না হলে ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য অন্য রাজ্যের ভোটকুশলী আনতে হয় তৃণমূলকে?    যদিও এটা তৃণমূল দলের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রশ্ন জাগে, তৃণমূল দলে কি রাজনীতিবিদ নেই?  এবার আসা যাক সিপিএমের কথায়। এদের আবার দেশের নেতা পছন্দ নয়। রাজনীতিবিদ বা আদর্শ বিদেশ থেকে আমদানি করে।  অর্থাৎ বিদেশি নেতাদের আদর্শ বা তাদের চিন্তা ভাবনাকে ভারতবর্ষে নিয়ে এসেছে। এরাই একদিন শ্লোগান তুলত, ভুলতে পারি বাপের নাম, ভুলবো নাকো ভিয়েতনাম। চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান। নেতাজি তোজোর কুকুর। রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি বলেছে । মার্কসবাদের মূল কথা যদি সবাই সমানভাবে থাকব হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেবী দুর্গা। আমরা যদি দুর্গা ঠাকুরের পরিবার দেখি যেখানে রাক্ষস, সিংহ, মহিষ, ইঁদুর, সাপ, হাঁস, পেঁচা সবাই আছে। এদের একে অপরের সঙ্গে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক। তারা  যদি সবাই একসাথে একই পরিবারে থাকতে পারে, তার থেকে বড় উদাহরণ হতে পারে না। তার জন্য বিদেশি মতবাদ আমদানি করতে হয় না। এবার আসা যাক বিজেপির কথায়। প্রতিটি দলই একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী। বিজেপিতে কি নেতা নেই?  নাহলে অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে এনে  নেতা নিয়ে আসতে হয়? সদ্য তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়ে যারা নেতা হয়েছেন তাঁরা বিজেপির মতাদর্শ কতটা রপ্ত করেছেন?  তাঁরা নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের পালস্ বুঝতে পারছেন? বিজেপি অন্য রাজ্য থেকে নেতা নিয়ে  এসে  প্রচার চালাচ্ছে। যাঁরা বাঙালির পালস বোঝেন না। বাঙালি উগ্র হিন্দুত্ববাদ পছন্দ করে না এটা এখনও বুঝে উঠতে পারেননি বিজেপির নেতারা।   নাহলে স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাঙালির হাতে গড়া দল বাংলায়  ক্ষমতা দখল করতে পারল না কেন?——-অপা

Loading