October 6, 2025

‘এতদিন দুশ্চিন্তায় ঘুম হয়নি, এদিন আনন্দে ঘুম আসেনি’

সোমালিয়া সংবাদ, পুরশুড়া: ১৭ দিনের উদ্বেগের মেঘ কাটিয়ে বুধবার যেন নতুন সকাল পুরশুড়ার নিমডাঙির জয়দেব পরামানিক  ও হরিণাখালির সৌভিক পাখিরার পরিবারে। জয়দেব-সৌভিক সহ সুড়ঙ্গ থেকে ২১ জন শ্রমিক উদ্ধার হওয়ার পর এক রাতেই পাল্টে গেছে বাড়ির সম্পূর্ণ ছবি। ভোর পাঁচটা থেকে বাড়ির অদূরে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে হাসিমুখে জমিয়ে  খরিদ্দারদের চা বিক্রি করেছেন জয়দেবের বাবা তাপসবাবু। দোকানে আসা সহকর্মী ও খরিদ্দারদের সঙ্গে জমিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টাও করেছেন। মঙ্গলবার যেখানে মুখ থেকে কথা বের হতে চাইছিল না বুধবার যেন একটার পর একটা কথা বাধা মানছিল না। তারপর একটু বেলা হতেই বাড়ি ফিরে রান্না চড়িয়েছেন। জয়দেবের মা তপতীদেবী শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই আর কয়েকটা দিনের মতো এদিনও গ্যাস ওভেনে রান্না করেন তাপসবাবু। দীর্ঘদিন পর এদিন বাড়িতে মুরগির মাংস আর ইলিশ মাছ রান্না হচ্ছে। ছেলে জয়দেবের প্রিয় খাবারের অন্যতম এই মাংস।  দুশ্চিন্তায় এতদিন এসব রান্না বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। বাবা তাপস পরামানিক হাসতে হাসতে বলেন, এতদিন দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে আনন্দে ঘুমোতে পারলাম না। সকলে মিলে আনন্দে করতে করতে রাত দেড়টা-দুটো বেজে গেল। আবার ভোরবেলা উঠে চা দোকান খুলতে হল। কখন ঘুমাবো বলুন। তবে এই না-ঘুমাতে পারার আনন্দ অনেক অনেক গুণ বেশি। এদিন সেই ঘুম জড়ানো চোখে-মুখে একরাশ তৃপ্তির হাসি নিয়ে নিজেই রান্না বসিয়েছেন। অসুস্থ স্ত্রী তপতীদেবী তাঁকে একটু-আধটু আনাজ কাটার ব্যাপারে সাহায্য করছিলেন। এই কদিন কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। এদিন তপতীদেবী বলেন, মনে খুশি উপচে পড়ছে। ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। হাসপাতালে আছে। খুব ভাল আছে। তবে এখন বেশি কথা হয়নি। এখন তারাও ব্যস্ত। খুব খুব ভাল লাগছে।

 অন্যদিকে সৌভিকের মা-বাবা বুধবার থেকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে কাজ শুরু করেছেন। সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মা গরুর জন্য খড় কাটছেন। বাবা জমিতে আলু বসানোর জন্য আলুবীজ তৈরি করছেন। বাবা অসিত পাখিরা বললেন, সকলের জমিতে আলু বসানো হয়ে গেছে। ছেলের দুশ্চিন্তায় আমরাই শুধু আলু বসাতে পারিনি। তাই এদিন থেকে আলু বসানোর কাজ শুরু করছি। এবার নিশ্চিন্ত মনে চাষের কাজ করতে পারব। মা লক্ষ্মীদেবী গরুর জন্য খড় কাটতে কাটতে বললেন, অনেকদিন পর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি। ছেলের বাইরে বেরোনোর খবরে পাড়া-প্রতিবেশীরা পর্যন্ত এসে অনেক রাত পর্যন্ত আনন্দ করে গেছেন। বমও ফাটিয়েছে। ওরা বলছে, যেদিন ছেলে ফিরবে সেদিন স্টেশন থেকে ফুলের মালা পরিয়ে ব্যান্ড বাজিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসবে। শুনে ছেলে বলেছে, একদম যেন তা না করা হয়। আসলে ছেলে আমার খুব লাজুক।

 এদিন সৌভিকের বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী, পুরশুড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি যশবন্ত ঘোষ। তাঁদের কাছে সৌভিকের মা লক্ষ্মীদেবী তাঁর ছেলের জন্য এরাজ‍্যেই যাতে একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়, তার আর্জি জানান। এ প্রসঙ্গে স্বপনবাবু বলেন, সৌভিক এবং জয়দেব দু’জনের কথাই আমরা দল এবং সরকারের কাছে তুলে ধরব। আমরাও চাই আমাদের রাজ্যের ছেলে আমাদের এখানেই চাকরি করুক। 

Loading