করোনার সেকেন্ডে ওয়েভ এসে গেছে। সরকার লকডাউন তুলে শিথিল মনোভাব নিতেই মানুষের অসচেতনতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অফিস-আদালত বাস, ট্রাক, ট্রেন, টোটো, অটো সমস্ত জায়গাতেই মাস্কের ব্যবহার নেই বললেই চলে। স্কুল খুলে গেছে, চলছে বিভিন্ন রকমের সামাজিক অনুষ্ঠান বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জলসা, মেলা, মজলিস ইত্যাদি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠান এমনকি হসপিটাল, নার্সিং হোম কোভিড বিধি সঠিকভাবে পালন করছেন না। তাই এই পরিস্থিতির জন্য বিশেষ কমিশন অথবা নোডাল টিম গঠন করা দরকার, যাদের কাজ হবে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় কঠোরভাবে করোনা বিধি কার্যকরী করা। নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে চলে গেছে প্রশাসন। আছে যথেষ্ট পরিমাণের কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাই পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী উভয়কে নির্বাচনের কাজের সাথে সাথে মহামারী পরিস্থিতিতেও কাজে লাগাবার অত্যন্ত সুবর্ণ সুযোগ। নাগরিকরা এখনও বুঝতে পারছে না যে তারা কত বড় বিপদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সমস্ত রাজনৈতিক দল দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বিভিন্ন জায়গায় সভা, রোড শো, স্ট্রীট কর্নার ইত্যাদি কর্মসূচি করছে। তাদের মুখে একবারের জন্য বলতে শোনা যাচ্ছে না, আপনারা মাস্ক ব্যবহার করুন ,দূরত্ব বজায় রাখুন। ক্ষমতা দখলের জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দল মরিয়া চেষ্টা করছে। যে সমস্ত নাগরিকদের ভোটের জন্য গঠন হবে নতুন সরকারের, অথচ এই মুহূর্তে ভোট নেওয়া ছাড়া সেই নাগরিকদের সুরক্ষার কথা ভাবছে না কোনো রাজনৈতিক দলই। স্বার্থপরতার একটা সীমা থাকা দরকার। নির্বাচন কমিশনই বা কেমন? কোভিড পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে কোন গাইড লাইন নেই কেন কমিশনের? ভোট দেওয়ার সময় ভোটারদের সুরক্ষার জন্য আদেও কোভিড বিধি-নিষেধ আছে তো? রেশন দোকান, মুদির দোকান ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে মানুষ মাস্ক ছাড়াই অবাধে চলাচল করছে। সরকার যখন ঘোষণা করছে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও মানুষকে সচেতন থাকতে হবে, সেই সচেতনতা মানুষের মধ্যেই নেই। নতুন যে করোনা স্ট্রেইন দেখা দিয়েছে তাতে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে নতুন স্ট্রেইনে এই ভ্যাকসিন কার্যকরী নয়। এতকিছু জেনেও সরকারও কোন কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যেটা ভবিষ্যতের পক্ষে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হতে পারে। তখন সরকার বা জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে তো? হসপিটাল, ডাক্তারবাবুরা, হসপিটাল স্টাফ, অ্যাম্বুলেন্স পরিবহন ব্যবস্থা, কোয়ারেন্টিন সেন্টার প্রস্তুত আছে তো? আতঙ্কিত করছি না, শুধুমাত্র এক দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যম হিসাবে প্রত্যেককে সাবধান ও সচেতন করছি মাত্র। সমাজের প্রতিটি স্তরে অনলাইন কম্পিউটারাইজড ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কমন সার্ভিস সেন্টারগুলি এ বিষয়ে সরকারি সাহায্য পেলে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে। করোনাকালে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান শিখতে পেরেছ এবং বুঝতে পেরেছে বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবস্থা জরুরী কতটা, তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত সমাজের প্রতিটি স্তরে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা পৌছে দেওয়া গেল না কেন? এই দায় সরকারকে নিতে হবে। সজাগ হোন। আমরা কিন্তু প্রত্যেকেই কম-বেশি জানি আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এমনকি বাইরের দেশেও আবার লকডাউন শুরু হয়েছে। তাই সরকার কঠিন পদক্ষেপ না নিলে সামাল দেওয়া কিন্তু মুশকিল। সমাজের প্রতিটি স্তরে শিক্ষিত মানুষদের পথে নামতে হবে, জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে হবে। ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্ক অথবা N95 মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে, ব্যবহার না করলে ও সমস্ত জায়গায় প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে উক্ত আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এর সাথে সাথে এই বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচার ব্যবস্থা জারি রাখতে হবে। গন পরিবহন ব্যবস্থায় যতগুলি সিট আছে তত সংখ্যক যাত্রীর থেকে বেশি যাত্রী যাতে পরিবহন না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। কর্মীদের এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। নিয়ম না মানলে পারমিট বাতিল করে দিতে হবে। গণপরিবহনের যানবাহনগুলোকে এবং সমস্ত পাবলিক প্লেসকে নিয়মিতভাবে স্যানিটাইজার করতে হবে ও এ বিষয়ে বিশেষ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। সমস্ত ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কোভিড পরিস্থিতি এক বছরের বেশি অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরও সাধারণ মানুষ এখনও অসচেতন, তাই একমাত্র কঠোর আইন প্রণয়নের মাধ্যমেই এই মহামারী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব।
More Stories
জয়রামবাটিতে স্টেশনের উদ্বোধন ১১ ডিসেম্বর করার দাবি : কামারপুকুর রেল চাই পক্ষের আবেদন
দার্জিলিংয়ে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে মৃত ১৩, নিখোঁজ ১
কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীতে মমতা–অভিষেক