সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বর্তমানে কৃষিতে লাভবান হতে হলে একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করা একটি কার্যকর কৌশল। পেঁপে ও কচুর সমন্বিত চাষ (ইন্টারক্রপিং) করে কম জায়গায় বেশি উৎপাদন ও আয় করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে পেঁপে গাছ উপরের দিকে বাড়ে, আর কচু গাছ নিচু স্তরে ছড়ায়—একটি অন্যটিকে বাধা দেয় না।
কেন পেঁপে ও কচু একসাথে চাষ করবেন?
✅ জমির সর্বোত্তম ব্যবহার: পেঁপে গাছের নিচের ফাঁকা জায়গায় কচু চাষ করে জমির সম্পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
✅ মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ: কচুর পাতা মাটিকে ছায়া দেয় ও আর্দ্রতা ধরে রাখে, যা পেঁপে গাছের জন্য উপকারী।
✅ আয় বৃদ্ধি: একই জমি থেকে দুটি ফসল বিক্রি করে আয় দ্বিগুণ করা যায়।
✅ কম রোগ-পোকার ঝুঁকি: মিশ্র চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
চাষ পদ্ধতি
১. জমি প্রস্তুতি
- মাটির ধরন: দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি পেঁপে ও কচু চাষের জন্য আদর্শ।
- জমি চাষ: ২-৩ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করুন।
- সার প্রয়োগ: প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন গোবর/কম্পোস্ট ও জৈব সার মিশিয়ে নিন।
২. পেঁপে রোপণ
- চারা নির্বাচন: উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাত (যেমন—রেড লেডি, পূসা নানহা) বেছে নিন।
- রোপণ দূরত্ব: ৭x৭ ফুট বা ৮x৮ ফুট দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করুন।
- গর্ত তৈরি: ১.৫x১.৫x১.৫ ফুট আকারের গর্ত করে গোবর ও ট্রাইকোডার্মা মিশিয়ে নিন।
৩. কচু রোপণ
- জাত নির্বাচন: দেশি কচু, মুখী কচু বা মনকচু ভালো ফলন দেয়।
- রোপণ পদ্ধতি: পেঁপে গাছের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় ২-৩ ফুট দূরত্বে কচুর কন্দ বা লতা রোপণ করুন।
- মালচিং: খড় বা শুকনো পাতা দিয়ে মাটি ঢেকে দিন যাতে আর্দ্রতা বজায় থাকে।
৪. সেচ ও নিষ্কাশন
- সেচ:
- পেঁপে গাছে সপ্তাহে ১-২ বার সেচ দিন (শুষ্ক মৌসুমে)।
- কচু গাছ নিয়মিত জল পছন্দ করে, তবে জমিতে যেন জল জমে না থাকে।
- নিষ্কাশন: অতিরিক্ত জল যাতে না জমে, তার জন্য নালার ব্যবস্থা রাখুন।
৫. সার ব্যবস্থাপনা
সার | পেঁপে (প্রতি গাছে) | কচু (প্রতি হেক্টরে) |
---|---|---|
ইউরিয়া | ১০০-১৫০ গ্রাম (মাসে একবার) | ১০০-১৫০ কেজি |
টিএসপি | ৫০-১০০ গ্রাম | ৮০-১০০ কেজি |
এমওপি | ৫০-১০০ গ্রাম | ৮০-১০০ কেজি |
জৈব সার | প্রতি ২ মাসে কম্পোস্ট | নিয়মিত জৈব সার |
৬. রোগ ও পোকামাকড় দমন
- পেঁপের সাধারণ রোগ: পাউডারি মিলডিউ, এনথ্রাকনোজ (ব্যাভিস্টিন বা নিম তেল স্প্রে করুন)।
- কচুর সমস্যা: লিফ ব্লাইট, পোকা (নিমের নির্যাস বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করুন)।
৭. ফসল সংগ্রহ
- কচু: ৪-৫ মাস পর পাতা ও কন্দ সংগ্রহ করা যায়।
- পেঁপে: ৭-৮ মাস পর ফল দেওয়া শুরু করে এবং ১.৫-২ বছর ধরে ফলন দেয়।
লাভের হিসাব
- পেঁপে: প্রতি হেক্টরে ৫০-৭০ টন পর্যন্ত ফলন (মার্কেটে দাম ১৫-৩০ টাকা/কেজি)।
- কচু: প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ টন (দাম ২০-৫০ টাকা/কেজি)।
- মোট আয়: পেঁপে ও কচু মিলে প্রতি হেক্টরে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ সম্ভব।
উপসংহার
পেঁপে ও কচুর সমন্বিত চাষ একটি টেকসই ও লাভজনক কৃষি মডেল। সঠিক পরিচর্যা ও পরিকল্পনা করলে কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। তাই কৃষকরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের আয় বাড়াতে পারেন।
💡 পরামর্শ: স্থানীয় কৃষি বিভাগ বা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে আরও তথ্য নিন এবং প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করুন।

More Stories
বস্তায় আদা চাষ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর
ফসলের পোকা দমনে মেহগনি গাছের বীজ থেকে জৈব কীটনাশক তৈরির পদ্ধতি
পশ্চিমবঙ্গে ধান উৎপাদনে রেকর্ড, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ উৎপাদন