সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ ভারতের আদিবাসী ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গৌরবময় অধ্যায়। তিনি শুধু একজন সমাজসংস্কারক নন, বরং আদিবাসী সমাজের অধিকার রক্ষায় ও ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্যতম এক কিংবদন্তি নেতা ছিলেন।
- প্রয়াণ: ৯ জুন, ১৯০০
- স্থান: রাঁচি জেল (বর্তমান ঝাড়খণ্ড)
বিরসা মুন্ডা জন্মগ্রহণ করেন ১৫ নভেম্বর ১৮৭৫ সালে বর্তমান ঝাড়খণ্ডের উলিহাতু গ্রামে। তিনি মুন্ডা জনজাতির অন্তর্গত এবং তাঁর জন্মের সময় আদিবাসী সমাজ নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হচ্ছিল।
তিনি কম বয়সেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন, যা উলগুলান (বিপ্লব) নামে পরিচিত। তাঁর আন্দোলনের মূল দাবি ছিল:
- জমির অধিকার আদিবাসীদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া।
- খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তর এবং মিশনারি চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
- ব্রিটিশ জমিদারি ব্যবস্থার অবসান।
১৯০০ সালের শুরুতে বিরসা মুন্ডা-র নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু হয়। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ভগবানের দূত এবং আদিবাসীদের রক্ষা করতে এসেছেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার আদিবাসী তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
- ব্রিটিশ সরকার বিরসাকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করে।
- ৯ জুন ১৯০০ সালে, মাত্র ২৫ বছর বয়সে, তিনি রাঁচি কারাগারে রহস্যজনকভাবে প্রয়াত হন।
- মৃত্যুর কারণ নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে – অনেকেই মনে করেন তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
- বিরসা মুন্ডা’কে ‘ভগবান’ হিসেবে পূজিত করা হয়।
- তাঁর নামে বিভিন্ন স্থানে মূর্তি, বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর গড়ে তোলা হয়েছে।
- ২০২১ সালে ভারত সরকার ১৫ নভেম্বরকে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
ভগবান বিরসা মুন্ডা ভারতের সেই সব মহান বীরদের একজন, যাঁদের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে দেয়। তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি এক সত্যিকারের বিপ্লবী, যিনি তাঁর জনগণের অধিকারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
“বিরসা মুন্ডা শুধু একজন নেতা ছিলেন না — তিনি ছিলেন একটি আন্দোলনের প্রতীক।”
ভগবান বীরসা মুণ্ডার প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, “বীরসা মুণ্ডা ছিলেন আদিবাসী সমাজের সংগ্রামের প্রতীক, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।“
বীরসা মুণ্ডার ১২৫তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টে প্রধানমন্ত্রী লেখেন—
“ভগবান বীরসা মুণ্ডা আদিবাসী ভাই-বোনদের সুরক্ষা ও কল্যাণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর সাহস, আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্য সরকার উত্তরবঙ্গে ‘বীরসা মুণ্ডা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়াও তাঁর জন্মদিন ১৫ নভেম্বরকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা রাজ্যের আদিবাসী সমাজের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।


More Stories
নীতিশ সরকারের নতুন দান — ২৫ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্কে পৌঁছল ১০ হাজার টাকা
বিজয়া দশমী: অধর্মের পরাজয় ও ধর্মের জয় উদযাপন
মহা অষ্টমী : দেবী আরাধনার সর্বোচ্চ শিখর