October 6, 2025

কর্ণসুবর্ণ – এক হারিয়ে যাওয়া রাজধানীর স্মৃতি



সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ শান্ত, নিরিবিলি এক গ্রাম। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে লোকাল ট্রেন। কর্ণসুবর্ণ স্টেশনের নামটা ঘোষিত হচ্ছে মাইকে। যাত্রীদের কেউ কেউ ব্যাগ গোছাচ্ছেন নামার জন্য, কিন্তু ক’জনই বা জানেন এই স্টেশনের নামেই লুকিয়ে আছে বাংলার এক গৌরবময় অতীত?

আজকের কর্ণসুবর্ণ, যা বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত, এককালে ছিল প্রাচীন বঙ্গের রাজধানী। সপ্তম শতাব্দীতে এইখান থেকেই শাসন চালিয়েছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন শাসক — সম্রাট শশাঙ্ক। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করে বাংলাকে একটি শক্তিশালী স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের রূপ দেন তিনি। কর্ণসুবর্ণ ছিল সেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।


সম্রাট শশাঙ্কের শাসনকাল প্রায় ৬০০–৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ। তিনি শুধু বঙ্গই নয়, মগধ, উড়িষ্যা, এবং তৎকালীন দক্ষিণ বিহার পর্যন্ত তার প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। কর্ণসুবর্ণ থেকে পাঠানো হতো দূতাবলী, পরিচালিত হতো প্রশাসন ও রাজনীতি। এমনকি হিউয়েন সাঙ-এর ভ্রমণ বর্ণনাতেও এই নগরীর উল্লেখ মেলে।


সময়ের স্রোতে রাজপ্রাসাদ বিলীন হয়ে গেছে। এখন সেখানে যা রয়ে গেছে তা হলো কিছু প্রাচীন ইটের স্তূপ, একটি ভগ্ন বৌদ্ধ স্তূপ, ও খণ্ড-বিখণ্ড পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। এলাকাটি আংশিক খনন করা হলেও আরও গবেষণার অভাবে তার সম্পূর্ণ ইতিহাস এখনও অজানা।

স্থানীয়দের জীবন যাত্রা এখন গ্রামীণ ছন্দেই চলে — মাঠে চাষ, গ্রাম্য হাট, আর ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে ছোটদের খেলা। কিন্তু এই আধুনিক জীবনের মাঝেও প্রতিটি ধ্বংসাবশেষ যেন ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।


ইতিহাসবিদদের মতে, কর্ণসুবর্ণ এককালে বাণিজ্য, শিক্ষা, ও কূটনীতির কেন্দ্র ছিল। এখানেই বসেছিলেন সেই শাসক, যিনি হর্ষবর্ধনের মতো রাজাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।


কর্ণসুবর্ণ শুধু এক টুকরো ইটের ধ্বংসাবশেষ নয় — এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, জাতিগত স্মৃতি। প্রতিটি পাথর, প্রতিটি ধ্বংসস্তূপ আজও যেন বলে যায় শশাঙ্কের সেই গৌরবগাথা।

একবার যদি আপনি কর্ণসুবর্ণ স্টেশনে নামেন, কিছুক্ষণ সময় দিন নিজেকে — চোখ বন্ধ করে দাঁড়ান। হয়তো শুনতে পাবেন দূরে যুদ্ধের ঢাকের আওয়াজ, রাজপুরুষের হুংকার, কিংবা এক বিস্মৃত সাম্রাজ্যের নিঃশব্দ আকুতি।

Loading