সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ ভারতের কৃষি সমাজে সমবায় আন্দোলনের ইতিহাস সুদীর্ঘ। উনিশ শতকের শেষ ভাগে মহাজনি প্রথার শোষণে জর্জরিত কৃষকেরা যখন দিশেহারা, তখনই জন্ম নেয় সমবায়ের ধারণা। ১৯০৪ সালে ভারতে প্রথম সমবায় আইন প্রণয়ন হয়। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—মহাজনের সুদের দুষ্টচক্র থেকে কৃষককে মুক্তি দেওয়া। সেই থেকে গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে সমবায় আন্দোলন। গোঘাটও এর ব্যতিক্রম নয়।
সমবায় মানেই কৃষকের সহায়ক বন্ধু। জমিতে সেচের জল থেকে সার, কীটনাশক, ট্রাক্টর—সবই মিলত সমবায়ের মাধ্যমে। আবার লোন পাওয়া যেত ন্যূনতম সুদে। অনেক সময় চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও দিত সমবায় সমিতি। এক কথায় কৃষকের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল সমবায়।
কিন্তু আজ সেই সমবায়ই ধুঁকছে ঋণ খেলাপির বোঝায়। সমবায়ের কর্মীরা জানিয়েছেন, বহু কৃষক লোন নিয়ে শোধ করছেন না। শুধু কৃষকরাই নয়, বিভিন্ন স্বয়ংবর গোষ্ঠীও ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করছে। এর ফলে সমবায় সমিতির খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আসল টাকা আদায় না হওয়ায় সুদের চাপ প্রতিদিন বেড়ে চলেছে।
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, সমবায় সমিতি আজ আর্থিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে। কৃষক মারা গেলে বা অন্য কারণে ঋণ শোধ না করলে সেই দায়ভার বহন করতে হচ্ছে সমবায়কে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলিতে কিছুটা হলেও রিলাক্সেশনের সুবিধা থাকে, কিন্তু সমবায় সমিতিতে সেই সুবিধা নেই। ফলে কৃষকেরা ঋণ শোধের পথে আগ্রহ হারাচ্ছেন।গোঘাটের বুকে নামকরা এমনকি হুগলি জেলার মধ্যেও প্রথম সারির সমবায় সমিতি হল তিলাড়ী সমবায় সমিতি। সেই সমিতিও খেলাপি ঋণের দায়ে জর্জরিত।
এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—কৃষকের কল্যাণের জন্য গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানই যদি আজ দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে আবার কি মহাজনি প্রথার দিকে ফিরে যাবে সমাজ?
সমবায় আন্দোলনের সাফল্যের ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। স্বাধীনতার পর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে, সবুজ বিপ্লব সফল করতে সমবায়গুলির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। গোঘাটের মতো গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত গড়েছিল এই সমবায়ই। কিন্তু আজ সেই ভিত কেঁপে উঠছে।
তাই এখনই দরকার বড় পদক্ষেপ। গোঘাট সমবায় সমিতি কর্মচারী সংগঠনের সম্পাদক তন্ময় মুখার্জিও এই খেলাপি ঋণের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। উনার অভিমত কঠোর নিয়মকানুন এবং আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে যাতে লোন দেওয়া ও আদায় দু’টোই স্বচ্ছভাবে হয়। অন্যদিকে, প্রকৃত অসহায় কৃষককে রক্ষা করতে মানবিক নীতি নিতে হবে। ঋণ পরিশোধে অক্ষম পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, পুনর্গঠন বা আংশিক রিলাক্সেশনের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা, কৃষকের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে—সমবায় কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি কৃষকের নিজের সম্পদ। চাষীরা যদি নিজের দায়িত্ব না বোঝেন, তবে সমবায় বাঁচবে না, আর সমবায় না বাঁচলে কৃষকের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে ঢেকে যাবে।আজ সমবায় বাঁচানো মানেই কৃষককে বাঁচানো, কৃষক বাঁচানো মানেই গোটা সমাজের অস্তিত্ব রক্ষা করা। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয় , তবে আগামী দিনে গোঘাটের সমবায়গুলির পতন শুধু স্থানীয় কৃষককেই নয়, গোটা অঞ্চলের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।

More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি