সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; আরামবাগ শহরের অলিগলি, চৌরাস্তা, বাজার কিংবা ঘাট—যেদিকেই চোখ ফেরানো যায়, দেখা মিলছে একের পর এক রাজনৈতিক পতাকা। কখনো বাতাসে উড়ছে, আবার কোথাও ছিঁড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। কোথাও ড্রেনের নোংরা জলে ভেসে যাচ্ছে, আবার কোথাও দেখা যাচ্ছে পায়ে মাড়িয়ে মানুষ হেঁটে যাচ্ছে তার উপর দিয়ে।
যে পতাকাগুলি একদিন রঙিন কাপড়ে ছাপা প্রতীক নিয়ে জনআন্দোলনের প্রতীক হিসেবে মানুষের হাতে ধরা দিয়েছিল, আজ সেগুলি কেবলমাত্র অবহেলার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় বড় মিছিল-মিটিং বা নির্বাচনের সময় প্রচারের উন্মাদনায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয় এই পতাকা। অথচ কিছুদিন পরই দেখা যায়, সেই পতাকাই ব্যবহার হচ্ছে বাসন মাজার কাপড় হিসেবে, গাড়ি ধোয়ার কাজে কিংবা ঝাঁটা দেওয়ার কাজে। এমনকি কিছুদিন আগে ভাইরাল হওয়া একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, মাটিতে পড়ে থাকা পতাকার উপর কুকুর মল-মূত্র ত্যাগ করছে। পতাকার ওপর গুথঠকার পিক, চায়ের কাপ পড়ে আছে, এই দৃশ্য কেবল লজ্জাজনকই নয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির মানকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
রাজনৈতিক দলের জন্য পতাকা শুধু এক টুকরো কাপড় নয়—এটি তাদের অস্তিত্ব, তাদের প্রতীক, তাদের আন্দোলনের প্রতিফলন। কিন্তু একবার দল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই পতাকার আর কোনো মর্যাদা থাকে না বলেই মনে হয়। অথচ পতাকা তৈরিতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে অনায়াসে বহু গরিব মানুষের জন্য কাপড় কেনা যেত, কিংবা কর্মীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা যেত। ভালো কাজ এবং স্থায়ী সম্পদ তৈরি না করে পতাকা দিয়ে এলাকা মুড়ে ফেলার কম্পিটিশন চলছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে।
একে তো এলাকাজুড়ে বড় বড় বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানারে আচ্ছন্ন—তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক পতাকার ভিড়। শহরের দৃশ্য সৌন্দর্যায়ন নষ্ট হচ্ছে।
প্রশ্ন একটাই—যদি এই পতাকাগুলির সঠিক সম্মান রক্ষা করা না যায়, তবে এমন করে লাগানোরই বা প্রয়োজন কী? শুধু শক্তি প্রদর্শন কিংবা প্রচারের নামে পতাকার অবমাননা চলতে পারে না। আইন করে যদি রাজনৈতিক দলগুলির এই অযাচিত পতাকা সন্ত্রাস বন্ধ করা যায়, তবে অন্তত শহর, গ্রাম এবং সমাজ দুটিই বাঁচবে এক বড় অবমাননা থেকে।
আরামবাগের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই পতাকাগুলি আমাদের মনে একটাই প্রশ্ন জাগায়—যে প্রতীকের জন্য এত লড়াই, সেই প্রতীকেরই কি আজ কোনো মূল্য নেই?




More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি