October 6, 2025

নজিবুল করিম: অসহায় মানুষের কাছে মুশকিল আসান, খানাকুলবাসীর আশার আলো

সোমালিয়া সংবাদ, খানাকুল: সাদা কুর্তা পরা সরল সাদাসিধে সাধারন এক মানুষ। কিন্তু তার সঙ্গে অন্তরের জোর ও বীরত্ব মিলেমিশে একাকার হয়েছে। আর সেই সংমিশ্রণ কোন পুরুষসিংহের চেয়ে কম নয়। ঠিক এভাবেই খানাকুলের আপামর মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তৃণমূলের হুগলি জেলা সম্পাদক মুন্সি নজিবুল করিম। তবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ের বন্ধনে তাঁকে কখনোই বেঁধে রাখা যায়নি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ এমনকি রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে নিজেরই অজান্তে তিনি একজন ‘মুশকিল আসান’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছেন। গত কয়েক বছরে একের পর এক ঘটনায় সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে তাঁকে ঘিরে। আর যার জেরে কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পক্ষ থেকেও লিখিতভাবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শংসাপত্র। সেটা ছিল ২০১৫ সাল। ধান‍্যগোরী গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়াদহ গ্রামের মানুষ বিধ্বংসী বন্যায় আটকে পড়েছিলেন। নজিবুল তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ৬৫৫ জনকে উদ্ধার করেছিলেন। একটা স্পিডবোট নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে ঘুরে তিনি একের পর এক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন। ব্যবস্থা করেছিলেন খাবারের। অভাবীদের প্রতি তাঁর মানবিক উদ্যোগ দেখে কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন তাঁর উদ্দেশ্যে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, ‘এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ, সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা, বিশেষত যুবকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা দেখে ভাল লেগেছে। মনে হয়েছে এই তরুন নেতাটির ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল হবে যদি সে তার এই সহজাত বৃত্তিগুলিকে ঠিকমতো ধরে রাখতে পারে।’ শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের এই পর্যবেক্ষণে যে এতটুকু ত্রুটি ছিল না তা বারেবারেই প্রমাণ হয়েছে। ২০১৭ সালে তিনি ওই একই গ্রাম থেকে ৩৫ জন বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন। তাঁর মানবিক কাজের উদাহরণ দিতে গেলে লিখে শেষ করা যায় না। ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে তৃণমূলের দলীয় কর্মসূচি ‘‌বঙ্গধ্বনি যাত্রা’‌ চলাকালীন খানাকুল-১ নম্বর ব্লকের কিশোরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গুজরাট গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখানে পিতৃহারা দুই ব্রাহ্মণ বালককে দেখে তাঁর মন কেঁদে উঠেছিল। তিনি তখন ওই দুই বালকের সারাজীবনের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন। এছাড়াও অসহায় ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। ওই ঘটনায় উপস্থিত মানুষ  হতবাক হয়ে যান। একজন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও  যেভাবে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের দুই বালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তা সত্যি দৃষ্টান্ত। নজিবুল করিম মানেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অনন্য উদাহরণ। একথা এতটুকু মিথ্যে নয়। প্রায় পাঁচশ ব্রাহ্মণের  হাতে করোনাকালে তিনি পঁচিশ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন এবং তাঁদেরকে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেন। এছাড়া পলাশপাই-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের খুনিয়াচক গ্রামের দুই মেয়ের বিধবা মা রেশমা বেগমের পরিবারকে প্রতিমাসে তিনি এক হাজার টাকা  ও বিনা পয়সায় সংসার চালানোর বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দেন। তবে শুধু রেশমা নয়, এরকম প্রায় পনেরটি পরিবারের খরচ তিনি জোগান। এছাড়াও করোনাকালে তিনি  বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া প্রায় পনেরোশো পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য নিজের পকেট থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে সাহায্য পাঠিয়েছিলেন। যা শুধু রাজ্য নয়, সারা ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। আমফানের ঝড়ের রাতে যখন সারা রাস্তার উপর গাছ উপড়ে পড়ে রয়েছে, সেই সময় তিনি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সহকর্মীদের সাথে সেই গাছ সরিয়ে সন্তানসম্ভবা মাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া কোথাও বাড়িতে আগুন লাগলে, কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যান নজিবুল‌। এ সমস্ত কিছুই খানাকুলের মানুষের  অজানা নয়।  আর তাই তাঁরা বিপদে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে নজিবুলের করিমের কাছে ছুটে যান বা ফোনে তাঁকে জানান। যেমনটি দেখা গিয়েছিল গতবছর ২৮ শে আগস্ট। ২৩দিন জ্বরে আক্রান্ত মুমূর্ষু ছাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে রক্ত দেওয়ার জন্য দুপুরের খাওয়া শেষ না করেই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন নজিবুল। রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তিনি সবসময় দলের নির্দেশকে যথাযথভাবে রূপায়িত করার চেষ্টা করেছেন। অসুস্থ বিধায়কের অনুপস্থিতিতে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি থেকে শুরু করে ‘বঙ্গধ্বনি যাত্রা’ সবেতেই তাঁকে দেখা গেছে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি নিজেও নতুন নতুন কর্মসূচির উদ্ভাবন করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ স্থাপন করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ‘কৃষি সম্পর্ক যাত্রা’, ‘জননী সম্পর্ক যাত্রা’ ইত্যাদি।  আগামী দিনে তিনি রাজনীতি করুন বা না করুন, কোন রাজনৈতিক দলে থাকুন বা না থাকুন, তিনি যে আগামী দিনে একইভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন এ ব্যাপারে খানাকুলের মানুষ নিশ্চিত। তাই বর্তমানে মুন্সি নজিবুল করিম হলেন খানাকুলের মানুষের কাছে আশার এক নতুন আলো। আর সেই আলোকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকার জন্য তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন এক অদ্ভুত নিরাপত্তা।

Loading