সোমালিয়া ওয়েব নিউজ : প্রতিভাবান ডাক্তারের আবিষ্কারে সারা ফেলে দিয়েছে বিশ্বের দরবার। খোদ তিনি নিজেই এক মারাত্মক রোগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা ডাক্তার রিচার্ড স্কোলার। গ্লিওব্লাস্টোমা – এক অত্যন্ত আগ্রাসী ধরনের মস্তিষ্কের ক্যানসার। এই রোগের এখনও পর্যন্ত কোনও স্বীকৃত চিকিৎসা নেই। আক্রান্তদের অধিকাংশরই আয়ু থাকে এক বছরেরও কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাত্র ৬ মাস। এই মারাত্মক রোগেই আক্রান্ত হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা ডাক্তার রিচার্ড স্কোলার। আর রোগ নির্ণয়ের পর, নিজের জীবন নিয়ে এক প্রকার বাজি খেলেছিলেন তিনি। মেলানোমা বা ত্বকের ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করেন। নিজস্ব পরীক্ষামূলক থেরাপিই তিনি নিজের উপর প্রয়োগ করেছিলেন। সেটাই ছিল, বিশ্বের প্রথম গ্লিওব্লাস্টোমা চিকিৎসার চেষ্টা। তারপর এক বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও তিনি দিব্যিই আছেন। মঙ্গলবার (১৪ মে), ৫৭ বছর বয়সী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি এখনও ক্যানসার মুক্ত। তাঁর সর্বশেষ এমআরআই স্ক্যানে দেখা গিয়েছে, টিউমারটি আর ফিরে আসেনি। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সম্মানীয় চিকিৎসক প্রফেসর স্কোলার। মেলানোমা ইনস্টিটিউট অস্ট্রেলিয়ার সহ-পরিচালক তিনি। গত এক দশক ধরে সহকর্মী তথা বন্ধু জর্জিনা লং-এর সঙ্গে মেলানোমা নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। মূলত ক্যানসারের ইমিউনোথেরাপি নিয়ে কাজ করেন এই জুটি। ইমিউনোথেরাপিতে, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাই ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিকে আক্রমণ করে। তাঁদের গবেষণা, বিশ্বব্যাপী মেলানোমা রোগীদের চিকিৎসার নাটকীয় উন্নতি ঘটিয়েছে। আগে মেলানোমা আক্রান্তদের মাত্র ১০ শতাংশ সুস্থ হতেন। ইমিউনথেরাপি ব্যবহার করে এখন প্রায় অর্ধেক রোগীই রোগমুক্ত হচ্ছেন। তাদের এই জীবন পাল্টে দেওয়া কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই বছর তাঁদের জুটিকে ‘অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার’ সম্মান জানানো হয়েছে। নিজেদের এই গবেষণাকেই প্রফেসর স্কোলারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করেছিলেন প্রফেসর লং। স্কোলারের ক্যান্সারের নিরাময়ও এইভাবে পাওয়া যাবে, এটাই ছিল তাঁদের আশা। মেলানোমাযর ক্ষেত্রে প্রফেসর লং এবং প্রফেসর স্কোলার দেখেছিলেন, ওষুধের সংমিশ্রণ ব্যবহার করলে ইমিউনোথেরাপি আরও ভাল কাজ করে। বিশেষ করে, টিউমার অপসারণের অস্ত্রোপচারের আগে যদি ইমিউনোথেরাপি ব্যবহার করা হয়, সেই ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। গত বছর প্রথম ব্রেন ক্যান্সারের রোগী হিসেবে, প্রি-সার্জারি ইমিউনোথেরাপি নিয়েছিলেন প্রফেসর স্কোলার। তার টিউমারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একটি বিশেষ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছিল। এই ভ্যাকসিন, ইমিউনোথেরাপির ওষুধের ক্যান্সার-শনাক্ত করার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতে, বেশ কয়েক মাস ধরে কঠিন চিকিৎসার চলেছে তাঁর। খিঁচুনি, লিভারের সমস্যা এবং নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এখন, তিনি একেবারে সুস্থ বলে জানিয়েছেন প্রফেসর স্কোলার। তিনি জানিয়েছেন, ফের তিনি রোজকার ব্যায়াম শুরু করেছেন। প্রায় রোজই ১৫ কিলোমিটার জগিং করছেন। তবে, তাঁর মস্তিষ্কের ক্যান্সার পুরোপুরি সেরে গিয়েছে, এমনটা মনে করলে ভুল হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা বিবিসিকে তিনি বলেছেন, “সত্যি বলতে, আমি এর আগে কোনও স্ক্যানের সময় এতটা নার্ভাস ছিলাম না। আমি রোমাঞ্চিত, আমি আনন্দিত। এর থেকে খুশির মুহূর্ত আর হতে পারে না। টিউমারটা এখনও ফিরে আসেনি জেনে ভাল লাগছে। স্ত্রী কেটি এবং আমার তিন সন্তানের সঙ্গে জীবন উপভোগ করার জন্য আরও কিছু সময় পেলাম।” প্রফেসর স্কোলারের সাম্প্রতিক স্ক্যানের ফল গোটা বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছে।
More Stories
আমেরিকার শাটডাউন ও তার ছায়া: ভারতীয় অর্থনীতি ও প্রবাসীদের জন্য কী বার্তা?
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম ভাষণ দিলেন নেপালের সুশীলা কার্কি
হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও সেতু