সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: ছেলে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জীবনে প্রথম মাসের বেতন বাবার হাতে তুলে বাবাকে বলছে -“বাবা তুমিতো বলেছিলে পিতৃ ঋণ কোনদিন শোধ হয় না। তুমি ছাব্বিশ বছরে আমার পেছনে যত টাকা খরচ করেছো তুমি কি জানো আমি আগামী তিন ছরে সে টাকা তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারবো”।
.বাবা : ( কিছুটা মুচকি হেসে) “একটা গল্প শুনবি?”ছেলেটা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। নিচু স্বরে বললো-“বলো বাবা শুনবো……”- তোর বয়স যখন চার আমার মাসিক আয় তখন দুই হাজার টাকা। ওই টাকায় সংসার চালানোর কষ্ট বাড়ির কাউকে কখোনো বুঝতে দেইনি। আমি আমার সাধ্যের মধ্যে সব সময় চেষ্টা করেছি তোর ‘মা কে ‘সুখী করতে। তোকে যেবার স্কুলে ভর্তি করলাম সেবার ই প্রথম আমরা দুজন- আমি-আর তোর মা পরিকল্পনা করেছি আমরা তোর পড়ার খরচের বিনিময়ে কি কি ত্যাগ করবো সে বছর তোর মাকে কিছুই দিতে পারিনি আমি। তুই যখন কলেজে উঠলি আমাদের অবস্থা তখন মোটা মুটি ভাল। কিন্তু খুব কষ্ট হয়ে গেছিল যখন তোর মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ঔষধ কেনার জন্য রোজ রোজ ওভারটাইম করে বাসে করে পায়ে হেটে ঘামে ভিজে বাড়ি ফিরতে খুব দুর্বিষহ লাগতো। কিন্তু কখোনো কাউকে বুঝতে দেইনি এমনকি তোর মা কেও না।একদিন শো রুম থেকে একটা বাইক দেখে আসলাম। সে রাতে আমি স্বপ্নেও দেখেছিলাম আমি বাইকে চড়ে কাজে যাচ্ছি। কিন্তু পরের দিন তুই বায়না ধরলি ল্যাপটপ এর জন্য। তোর কষ্টে আমার কষ্ট হয় বাবা। আমি তোকে ল্যাপটপ টা কিনে দিয়েছিলাম।আমার তখনকার এক টাকা তোর এখন এক পয়সা! কিন্তু মনে করে দেখ এই এক টাকা দিয়ে তুই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করেছিস। ব্রান্ড নিউ মোবাইলে হেড ফোন কানে লাগিয়ে সারা রাত গান শুনেছিস। পিকনিক করেছিস, ট্যুর করেছিস, কন্সার্ট দেখেছিস। তোর প্রতিটা দিন ছিল স্বপ্নের মতো। আর তোর একশ টাকা নিয়ে আমি এখন
- হার্টের বাইপাস করাই ডায়াবেটিক
- মাপাই । জানিস আমার মাছ খাওয়া
- নিষেধ, মাংস খাওয়া নিষেধ, কি করে এত
- টাকা খরচ করি বল! তোর টাকা নিয়ে তাই
- আমি কল্পনার হাট বসাই। সে হাটে আমি
- বাইক চালিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াই।
- বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাই। তোর
- মায়ের হাত ধরে তাঁত মেলায় ঘুরে বেড়াই।
- .বাবারা নাকি তোদের ভাষায় “খাড়ুশ টাইপ”।আমিও আমার
- বাবাকে তাই ভাবতাম । পুরুষ থেকে পিতা হতে
- আমার কোনো কষ্ট হয়নি, সব কষ্ট তোর মা
- সহ্য করেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর পিতা থেকে
- দ্বায়িত্বশীল পিতা হবার কষ্ট একজন পিতাই
- বোঝে।যুগে যুগে সর্বস্থানে মাতৃবন্দনা
- হলেও পিতৃবন্দনা কোথাও দেখেছিস?পিতৃবন্দনা
- আমি আশাও করি না। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা
- কোনো পিতা হয়তো প্রকাশ করতে পারে
- না,তবে কোনো পিতা কখনোই সন্তানের
- প্রতি দ্বায়িত্ব পালনে বিচ্যুত হয় না।আমি তোর
- পেছনে আমার যে কষ্টার্জিত অর্থ ব্যায় করেছি
- তা হয়তো তুই তিন বছরে শোধ দিতে
- পারবি……কিন্তু যৌবনে দেখা আমার স্বপ্ন
- গুলো ????? যে স্বপ্নের কাঠামোতে দাঁড়িয়ে
- তুই আজ তোর ঋণশোধের কথা
- বলছিস…….সেই স্বপ্ন গুলো কি আর
- কোনোদিন বাস্তব রুপ পাবে??????
- .বাবা চুপ করো প্লীজ!! আমি তোমার
- টাকা না তোমার ভালবাসা
- তোমায় ফিরিয়ে দিব।
- .হাহাহা বোঁকা ছেলে! বাবাদের ভালবাসা
- কখনো ফিরিয়ে দেয়া যায় না। ছোট্ট
- শিশুর মল মুত্রও মোছা যায় আর বুড়োদের
- ঘরেও ঢোকা যায় না।
- তোকে একটা প্রশ্ন করি বাবা। ধর তুই আমি
- আর তোর খোকা তিন জন এক নৌকায় বসে
- আছি। হটাৎ নৌকা টা ডুবতে শুরু করলো…..
- যে কোন একজনকে বাঁচাতে পারবি তুই।
- কাকে বাঁচাবি বল?
- .ছেলেটা হাজার চেষ্টা করেও এক চুল ঠোঁট
- নড়াতে পারছেনা!
- .উত্তর দিতে হবে না। ছেলেরা বাবা হয়,
- বাবা কখনো ছেলে হতে পারে না।
- পৃথিবীতে সব চেয়ে ভারী জিনিস কি
- জানিস?
- পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ!
- আমি শুধু ভগবানের কাছে একটা জিনিস
- চাই। আমার শেষ যাত্রায় যেন আমি আমার
- ছেলের কাঁধে চড়ে যাই। তাহলেই তুই একটা
- ঋণ শোধ করতে পারবি -তোকে কোলে
- নেবার ঋণ……..।
More Stories
১৩ হাজার ডলারের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো বিরানভূমি, যা পরিণত হলো প্রকৃতির স্বর্গে
কেন ব্যবহার করা হয় “ঘট” হিন্দু পূজায়?
মা দুর্গার মুখে উর্ণনাভ: মহামায়ার চিহ্ন