সোমালিয়া ওয়েব নিউজ: বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দুর্গেশনন্দিনী” আজও পাঠকের হৃদয়ে সমান প্রাসঙ্গিক। ইতিহাস, প্রেম, যুদ্ধ ও প্রতিশোধ—এই চারটি স্তম্ভকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই বর্ণময় কাহিনি। দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত প্রথম উপন্যাস। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। ১৮৬৫ সালের মার্চ মাসে এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। ওই সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হুগলি জেলার আরামবাগে মহকুমার DM ,DC হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্রের চব্বিশ থেকে ছাব্বিশ বছর বয়সের রচনা। এই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলা কথাসাহিত্যের ধারায় এক নতুন যুগ প্রবর্তিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে উড়িষ্যার অধিকারকে কেন্দ্র করে মোঘল ও পাঠানের সংঘর্ষের পটভূমিতে এই উপন্যাস রচিত হয়।
দিল্লীর প্রধান সেনাপতি অম্বররাজ মানসিংহের পুত্র কুমার জগৎসিংহ মান্দারণগামী পথে ঝড়ে পড়ে শৈলেশ্বর মহাদেব মন্দিরে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁর পরিচয় ঘটে মান্দারণ দুর্গের (হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার গোঘাট ব্লকে অবস্থিত গড় মান্দারণ) রাজকন্যা দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমা এবং তাঁর মা মহারাণী বিমলার সঙ্গে। পরিচয় গোপন রেখেও জগৎসিংহ ও তিলোত্তমার মধ্যে প্রেমের অঙ্কুর ফোটে।
এদিকে পাঠান সেনাপতি ওসমান খাঁ চক্রান্ত করে মান্দারণ দখল করেন এবং রাজা বীরেন্দ্র সিংহ, রানি বিমলা ও তিলোত্তমা-কে বন্দি করেন। একইভাবে কুমার জগৎসিংহও ধরা পড়েন। মিথ্যা বিচারে বীরেন্দ্র সিংহকে হত্যা করে পাঠান নবাব কতলু খাঁ।
স্বামীর হত্যার প্রতিশোধ নিতে রানী বিমলা কতলু খাঁকে হত্যা করেন। পাঠানদের সঙ্গে শেষপর্যন্ত কৌশলী সন্ধি হয় জগৎসিংহের মাধ্যমে, যা দিল্লীশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে।
আকস্মিকভাবে নবাবজাদী আয়েষা কুমার জগৎসিংহের প্রেমে পড়লে, আয়েষার প্রেমিক ওসমান খাঁ প্রতিহিংসায় জগৎসিংহের সঙ্গে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
এই জটিল পরিস্থিতির শেষে মান্দারণ রাজ্য পাঠানদের হাত থেকে মুক্ত হয় এবং মহারাণী বিমলার হাতে রাজ্যভার তুলে দেন অম্বররাজ মানসিংহ। ধুমধামে অনুষ্ঠিত হয় জগৎসিংহ ও দুর্গেশনন্দিনীর বিবাহ।
কালের নিয়মে সেই গৌরবময় দুর্গ আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক সময়কার প্রাসাদ, প্রাচীর, যুদ্ধের চিহ্ন—সবই আজ ইতিহাসের স্তব্ধ সাক্ষ্য। যদিও বর্তমানে সরকারের উদ্যোগে এটি এক বিনোদন ও পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে রূপ পেয়েছে, কিন্তু সেখানে আর না আছে গড়, না আছে কেল্লা।
হারিয়ে গেছে সেই দুর্গেশনন্দিনীর ইতিহাস, হারিয়ে গেছে মানুষের স্মৃতিচারণ।
“দুর্গেশনন্দিনী” শুধু একটি প্রেমের উপন্যাস নয়, এটি এক ঐতিহাসিক যুগের সাক্ষ্য বহন করে। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির মাধ্যমে বাঙালির সাহিত্যিক বোধ, ঐতিহ্য ও আত্মমর্যাদাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি