October 5, 2025

“নিরামিষভোজীদের মাংস” — ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের সোনার খোঁজ, রুগড়া মাশরুম

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বর্ষা নামলেই ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে শুরু হয় এক ব্যস্ততা। শাল, সেগুন ও জামুন গাছের ঘন ছায়ার নিচে মাটির অন্দরে লুকিয়ে থাকে এক প্রকৃতির উপহার — রুগড়া, আদিবাসীদের ভাষায় “নিরামিষ মাংস”।

দাম প্রায় কিলোপ্রতি ₹১০০০ থেকে ₹১২০০ — তবুও এর চাহিদা এতটাই, যে রুগড়া শুধু স্বাদের জন্য নয়, আদিবাসী জীবিকার অন্যতম স্তম্ভ। ছোটনাগপুর মালভূমির কোলে থাকা এই সবুজ অরণ্য এলাকা আদিবাসীদের বহু পুরনো ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক বোঝাপড়ার নিদর্শন বহন করে।

রুগড়া (বা পুটু) মাশরুমের বৈজ্ঞানিক নাম “বারোমিটার আর্থস্টার”। এটি একধরনের এক্টোমাইকোরাইজাল ছত্রাক, যা গাছের শিকড়ের সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে তোলে। মাটির খনিজ শোষণ করে গাছকে ফসফরাস সরবরাহ করে, এবং সেইসঙ্গে গাছের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিজেও পুষ্টি গ্রহণ করে।

এই মাশরুম জন্মায় ল্যাটেরাইট মাটিতে, যেখানে pH থাকে ৫.৫ থেকে ৬-এর মধ্যে। প্রায় ৩০°C তাপমাত্রা ও ৩৫০ মিমি-র বেশি বৃষ্টিপাতে এটি ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বজ্রপাতের সময় মাটিতে ছড়িয়ে পড়া নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড রুগড়ার বৃদ্ধিতে সহায়ক।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার মৌসুমে রুগড়া সংগ্রহের সময়। গুচ্ছ গুচ্ছ রুগড়া পেতে আদিবাসী মহিলারা মাটির সূক্ষ্ম ফাঙ্গাসের সাদা জাল দেখে তার অবস্থান নির্ধারণ করেন। খুঁড়লে বেরিয়ে আসে গোলাকৃতি, ডাঁটা-বিহীন মাশরুম – যার ভেতরের সাদা বা সাদাকালো অংশই খাওয়ার উপযোগী।

রুগড়ার স্বাদ অনেকটা মুরগির মাংসের মতো। তাই নিরামিষভোজীরাও একে “মাংস” বলেই স্বীকার করেন। রান্নার কাঁচামাল হিসেবে এটি যেমন জনপ্রিয়, তেমনই এর বনে টিকে থাকার ক্ষমতা এবং পরিবেশগত ভূমিকা একে করে তোলে অমূল্য।

তবে এত গুরুত্বপূর্ণ হলেও রুগড়ার এখনো কোনও কৃত্রিম চাষ সম্ভব হয়নি। এটি এখনও কেবল প্রকৃতির দান হিসেবে বনেই পাওয়া যায়। তাই একে ঘিরে আদিবাসীদের ঐতিহ্য, জীবিকা, স্বাদ এবং পরিবেশ – সব মিলিয়ে রুগড়া সত্যিই ঝাড়খণ্ডের গর্ব, একান্ত “জঙ্গলের সোনা”।

Loading