সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ আসাম মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত রাজ্যের জমি নীতি ও সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন দিশা দেখাল। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে বিশেষ শাখা (Special Branch)-র অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয়দের আপত্তি থাকলে লেনদেন সরাসরি বাতিল হবে। এই সিদ্ধান্ত নিছক প্রশাসনিক নয়, এর গভীরে রয়েছে রাজ্যের জনসংখ্যাগত, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত বাস্তবতা।
সরকারের যুক্তি স্পষ্ট—ভিনদেশি অনুপ্রবেশকারীরা যাতে স্থানীয়দের জমি দখল করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখাই এই নিয়মের প্রধান লক্ষ্য। বিশেষ শাখার তদন্তে টাকার উৎস, ট্যাক্স রেকর্ড ও নিরাপত্তার বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এতে লেনদেনে স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, তেমনি জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অনৈতিক অর্থ বা ভুয়ো নথির ব্যবহার কমবে বলেই সরকারের দাবি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো “জনগণের কণ্ঠই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত”। অর্থাৎ প্রশাসনিক অনুমতির পাশাপাশি এখন থেকে স্থানীয়দের মতামত জমি লেনদেন নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা নেবে। এর ফলে গ্রামীণ বা প্রান্তিক মানুষও নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষায় সরাসরি মত প্রকাশ করতে পারবেন। সামাজিকভাবে এটি ক্ষমতায়নের প্রতীক।
তবে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন—এমন নিয়ম কি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? জমি ক্রয়-বিক্রয় এক নাগরিক অধিকার। সেখানে ধর্মভিত্তিক শর্ত আরোপ এবং জনমতের ভিত্তিতে লেনদেন থামিয়ে দেওয়া ভবিষ্যতে আইনগত জটিলতা তৈরি করতে পারে।
এছাড়া, স্থানীয়দের আপত্তি বাস্তবে কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বা সামাজিক বিভাজনের কারণে এই আপত্তিকে অপব্যবহার করা হলে, জমি লেনদেন অকারণ জটিল হয়ে উঠতে পারে।
আসাম বহু দশক ধরে অনুপ্রবেশ সমস্যায় জর্জরিত। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) পর্যন্ত নানা ইস্যু রাজনীতিকে উত্তপ্ত করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন জমি আইনকে অনেকেই শাসক দলের ‘ভোট রাজনীতি’র অংশ বলেই মনে করছেন। স্থানীয় মানুষের ভীতি ও আবেগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া এই সিদ্ধান্তের অন্যতম উদ্দেশ্য কি না, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।
আসামের এই নতুন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে জমি লেনদেনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়। এতে যেমন স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার দাবি করা হচ্ছে, তেমনি মানুষের কণ্ঠস্বরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দিকটি নজরকাড়া। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই সিদ্ধান্ত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী হয়ে উঠবে, নাকি সত্যিই স্থানীয়দের জমি রক্ষায় কার্যকর প্রমাণিত হবে—তা সময়ই বলে দেবে।

More Stories
নীতিশ সরকারের নতুন দান — ২৫ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্কে পৌঁছল ১০ হাজার টাকা
বিজয়া দশমী: অধর্মের পরাজয় ও ধর্মের জয় উদযাপন
মহা অষ্টমী : দেবী আরাধনার সর্বোচ্চ শিখর