October 5, 2025

আরামবাগে তন্তুজ র বন্ধ আউটলেট: এক স্মৃতির নাম তন্তুজ

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বাংলার তাঁতের শাড়ি মানেই ‘তন্তুজ’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই ব্র্যান্ড বহুদিন ধরে বাংলার ঐতিহ্য বহন করে আসছে। জামদানি, বালুচরি, টাঙ্গাইল শাড়ি থেকে শুরু করে ধুতি, লুঙ্গি, বেডশিট কিংবা সুতির জামাকাপড়—সবই মিলত এখানে।
, বালুচরি, টাঙ্গাইল কিংবা সুতির শাড়ি—যা-ই বলুন না কেন, এক ছাদের নিচে মিলত সবকিছু। শুধু শাড়ি নয়, ধুতি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, বেডশিট— সকলের জন্যই ছিল সমান আকর্ষণ।

১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত তন্তুজের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের তাঁত সমবায় সমিতির হস্তনির্মিত পণ্য বাজারজাত করা। ১৯৯২-৯৩ সালে আরামবাগে প্রথম তন্তুজ আউটলেট খোলে। তখন থেকেই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে এই দোকান। অল্প দামে ভালো মানের জামাকাপড় কেনার সুযোগ পেতেন অনেকেই। পুজোর মরসুমে আউটলেটের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো।

কিন্তু গত দুই-তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে আরামবাগের এই তন্তুজ। দোকানের ছাতারে এখনও ‘তন্তুজ’ নামটি জ্বলজ্বল করছে, যদিও তার উপর জমেছে ধুলো ও ঝুল। পাশে ঝুলছে বহু পুরনো একটি বিশেষ ছাড়ের পোস্টারও। প্রতিবছর পুজোর আগে অনেক পুরনো ক্রেতা দোকানের সামনে এসে দাঁড়ান, ভিতরে ঢোকার ইচ্ছে জাগলেও শোনেন—“দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।” সরকারি কর্মীদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।

বর্তমানে তন্তুজ অনলাইন কেনাকাটা চালু করেছে। তবুও অনেকের মতে, সামনের দোকান থেকে শাড়ি বা কাপড় বেছে নেওয়ার আনন্দের সঙ্গে কোনো ডিজিটাল কেনাকাটার তুলনা হয় না। তাই আরামবাগের মানুষদের কাছে বন্ধ আউটলেট শুধু একটি দোকান নয়, বরং আবেগ ও স্মৃতির এক অমূল্য অংশ।আরামবাগের এই তন্তুজ শুধু একটি দোকান নয়—এটি ছিল এক টুকরো আবেগ, এক টুকরো স্মৃতি। আজ সেখানে কেবল ঝুলে আছে তালা, আর আলোহীন কাচঘেরা ঘরে ধুলো জমে আছে সময়ের মতোই। তবুও পুজোর সময় দোকানের নামফলক দেখলেই মনে পড়ে যায়—একসময় এখানেই মিলত নতুন শাড়ির গন্ধ, রঙিন কাপড়ের সারি, আর হাসিখুশি মানুষের ভিড়।
তন্তুজের প্রতি মানুষের টান আজও অটুট। তাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে—কবে খুলবে আবার আরামবাগের তন্তুজ?
সাধারণ মানুষের সেই প্রত্যাশাই যেন বাতাসে ঝুলে রয়েছে, উত্তরহীন।

Loading