সোমালিয়া ওয়েব নিউজ; হুগলি জেলার শেষ প্রান্তে গোঘাটের বদনগঞ্জ গ্রাম—কিন্তু এর বুকেই লুকিয়ে আছে এক মহৎ কাহিনি। আজও প্রবীণ মানুষরা বলেন, “এই স্কুল শুধু ইট কাঠের প্রতিষ্ঠান নয়, এ হলো শ্রী শ্রী মায়ের কৃপাধন্য এক আশ্রয়।”
শোনা যায়, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ যখন প্লীহা রোগে ভুগছিলেন, তখন মা সারদা বদনগঞ্জে আটচালায় এসে কবিরাজি চিকিৎসা করিয়েছিলেন। সেদিন রাস্তায় হেঁটে যেতে গিয়েই দিব্যদৃষ্টিতে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন—এই গ্রামে শিক্ষার আলো প্রয়োজন। সেই মুহূর্তেই শরৎ মহারাজকে নির্দেশ দেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে।
শরৎ মহারাজ দায়িত্ব দেন রাইটার্সে কর্মরত প্রবোধ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে। যিনি মায়ের শিষ্য ছিলেন। মায়ের ইচ্ছা যে তাঁর কাছে জীবনাদর্শ, তা প্রমাণ করতে ১৯১০ সালে প্রবোধবাবু নিজের চাকরি ছেড়ে দেন, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে বাঁশের খুঁটি ও খড়ের চালের ঘরে গুটিকয়েক ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করেন বদনগঞ্জ বিদ্যালয়ের।
বিগত শতাব্দীতে কত ঝড়ঝাপটা এসেছে! কখনো অর্থের অভাব, কখনো শিক্ষক স্বল্পতা—তবুও শ্রী শ্রী মায়ের অদৃশ্য শক্তি যেন প্রতিবারই এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়েছে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু সিংহ নিজেই একসময় ছিলেন এই স্কুলের ছাত্র, তারপর এই স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। আজ তিনি গর্বভরে বলেন, “এ শুধু আমার কর্মক্ষেত্র নয়, আমার সাধনার স্থান।”
বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে রয়েছে শ্রীশ্রী মা সারদা দেবীর মূর্তি, প্রতিষ্ঠাতা প্রবোধ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মূর্তি ও মন্দির। প্রতিদিন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা প্রণাম জানায় তাঁদের। এই দৃশ্য যেন প্রত্যেককে মনে করিয়ে দেয়—শিক্ষা শুধু পাঠ্যবই নয়, শিক্ষা হলো চরিত্রগঠন ও মানবিকতার সাধনা।
গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, যেমন মা সারদার কৃপায় বিদ্যালয়ের জন্ম, তেমনি তাঁর আশীর্বাদেই আবার নতুন রূপে গড়ে উঠবে এই শিক্ষালয়।
বদনগঞ্জ বিদ্যালয়ের ইতিহাস তাই শুধু অতীতের স্মৃতি নয়—এটি হলো এক চলমান সংগ্রামের কাহিনি, যেখানে মায়ের নাম উচ্চারণ করলেই নব উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রেরণা জাগে।

More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি