সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ বাজারে সহজলভ্য সয়াবিন তেল, রিফাইন্ড চিনি, পলিশড চাল ও ময়দার মতো খাদ্যপণ্যগুলো ক্রেতার কাছে সস্তা হলেও, এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কর্পোরেট ব্যবসার এক কৌশলী জাল।
খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এক কেজি সয়াবিন থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ২০০ মিলিলিটার তেল পাওয়া সম্ভব। অথচ বাজারে কেমিক্যাল মিশ্রিত প্রক্রিয়ায় এক কেজি সয়াবিন থেকে প্রায় এক লিটার তেল তৈরি হচ্ছে, যা আসলে ভোজনযোগ্য নয়। একইভাবে আখের রস থেকে তৈরি খাঁটি গুড়ের দাম বাজারে তুলনামূলক বেশি হলেও, কেমিক্যাল প্রক্রিয়াজাত সাদা চিনি সস্তায় ভোক্তার হাতে পৌঁছাচ্ছে। ভেজিটেবল অয়েলের ক্ষেত্রেও এক লিটার তৈরিতে প্রয়োজন হয় বিপুল পরিমাণ শাকসবজি—যার প্রকৃত বাজারমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
বিশ্লেষকদের অভিযোগ, সরকারী ভর্তুকি, সহজ সংরক্ষণব্যবস্থা, ও কর্পোরেট লবিং-এর জোরে এসব উচ্চমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত, পুষ্টিহীন খাদ্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলস্বরূপ মানুষ প্রতিনিয়ত এসব খাবারের দিকে ঝুঁকছে, আর দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এখানে রয়েছে এক সুপরিকল্পিত ফুড-ফার্মা কমপ্লেক্স। বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো একদিকে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছে, অন্যদিকে সেই খাদ্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উদ্ভূত রোগের চিকিৎসা সামলাতে ওষুধ কোম্পানি ও হাসপাতাল চালাচ্ছে। খাদ্য বিভাগ রোগ তৈরি করছে, আর ফার্মা বিভাগ তার চিকিৎসা দিয়ে মুনাফা তুলছে। ফলে ভোক্তারা অজান্তেই এক “লাভের চক্রে” আটকে পড়ছে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বাজারই বছরে লক্ষ কোটি টাকার বেশি। আর অসুস্থতার চিকিৎসা ব্যয়ে প্রতিবছর প্রায় লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই চক্র ভাঙতে চাই সচেতনতা ও নীতিগত হস্তক্ষেপ। ভোক্তাদের উচিত স্থানীয়, ঐতিহ্যবাহী ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন—লাল চাল, ঘানির তেল, দেশি শাকসবজি, গুড় ইত্যাদি বেছে নেওয়া। এটাই হতে পারে কর্পোরেটের মুনাফার ফাঁদ ভাঙার প্রথম পদক্ষেপ।
শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন একটাই—সস্তা খাবারের মোহে স্বাস্থ্য হারানো, নাকি সচেতন পছন্দে সুস্থ জীবন বেছে নেওয়া?

More Stories
আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কখন আতঙ্কিত, জেনে নিন
থাইরয়েড থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে সচেতনতার বার্তা