October 5, 2025

পুজোর আগে রাস্তা ও সেতু সংস্কারে জোর রাজ্যের — কিন্তু আরামবাগের রামকৃষ্ণ সেতু উপেক্ষিতই রয়ে গেল!

কলকাতা ও হাওড়ায় চলছে জোরকদমে মেরামতির কাজ, অথচ আরামবাগবাসীর আশাভঙ্গ

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ দুর্গাপুজো আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে। শহর জুড়ে জমজমাট প্রস্তুতি। তারই অঙ্গ হিসেবে রাজ্য সরকার এবার শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও সেতুর সংস্কারে বিশেষ জোর দিয়েছে। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (KMDA) জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই EM বাইপাসের গুরুত্বপূর্ণ ঢালাই ব্রিজ এবং ৪ নম্বর ব্রিজের সম্প্রসারণের কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে।

এবার কাজ শুরু হয়েছে শিয়ালদহ উড়ালপুলে, যা গত কয়েক মাসের টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই মেরামতির কাজ আগামী সোমবারের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। পুজোর আগে শহরের গতি-প্রকৃতিতে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেই লক্ষ্যেই এই তৎপরতা।

শুধু কলকাতা নয়, হাওড়াতেও চলছে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটের মেরামতি
দুই চাকার গাড়িচালকদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বেনারস রোড ও বেলিলিয়াস রোড। বর্তমানে সেই দুই রাস্তায় দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। স্থানীয়দের মতে, বহুদিন পর প্রশাসনের সক্রিয়তা এই এলাকায় স্বস্তি এনে দিয়েছে। কিন্তু আরামবাগ? ‘রামকৃষ্ণ সেতু’ যেন সরকারের অদৃশ্য তালিকায়!

রামকৃষ্ণ সেতু: সভ্যতার গতিপথ কি তবে থমকে গেল?

পুজোর আগে রাজ্যজুড়ে যখন উন্নয়নের ঢাক বাজছে, তখন আরামবাগের রামকৃষ্ণ সেতু যেন নির্বাক প্রতিবাদের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বহুদিনের ভগ্নদশা, ফাটল ধরা গায়ে যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—”আমার দিকে কেউ কি নজর দেবে?” প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই সেতুর উপর ভরসা রেখে জীবনযাত্রা চালিয়ে এসেছেন, অথচ আজ তা প্রায় মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

বাস পরিষেবা বন্ধ। মুন্ডেশ্বরীর পশ্চিম পাড়ের মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুরের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন। রোগী, চাকরিজীবী, ছাত্র-ছাত্রী—সবারই যেন দিন কাটছে দুর্ভোগের ঘেরাটোপে। অসুস্থ মানুষ চিকিৎসার জন্য আরামবাগ যেতে পারছেন না সহজে, ছাত্রদের শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে, শ্রমজীবী মানুষের পকেটে পড়ছে অতিরিক্ত পরিবহন খরচের বোঝা। জীবনযাত্রার গতি যেন কৃত্রিমভাবে শৃঙ্খলিত।

সবচেয়ে বেদনাদায়ক হল—প্রশাসন নির্বিকার। সরকারি হোক বা বিরোধী শিবির—সবাই চুপ করে শুধু দেখছে। সেতুর ভগ্নদশা নিয়ে সভা-সমিতিতে কথা আছে, প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু নেই কোনো বাস্তব উদ্যোগ। যেন থমকে গেছে সভ্যতার গতি, আর মানুষের কষ্ট প্রশাসনিক নীরবতায় চাপা পড়ে যাচ্ছে।

রামকৃষ্ণ সেতু শুধু কংক্রিট-লোহার কাঠামো নয়, এটি আরামবাগের মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। সেতুটি বন্ধ মানে শুধু পরিবহন নয়, এক বিশাল অঞ্চলকে সভ্যতার প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। আজকের দিনে যেখানে উন্নয়নের দাবি স্লোগানে মুখর, সেখানে রামকৃষ্ণ সেতুর দিকে তাকালে মনে হয়—অবহেলা কি তবে আমাদের একমাত্র অর্জন?

এলাকাবাসীর আক্ষেপ, “কবে আসবে সেই দিন, যখন প্রশাসন আমাদের দুঃখ-দুর্দশা বুঝবে?”—এই প্রশ্ন আজ প্রতিটি মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত। আর উত্তরহীন থেকে যাচ্ছে কেবলই।

Loading