October 5, 2025

রাজা রামমোহন রায় : সাংবাদিক থেকে নবজাগরণের পুরোধা

সোমালিয়া ওয়েব নিউজঃ আজ ২৭ সেপ্টেম্বর। এই দিনেই ১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। প্রয়াণ দিবসে আমরা তাঁকে শুধু সমাজসংস্কারক হিসেবেই স্মরণ করি না, স্মরণ করি এক সত্যিকারের সাংবাদিক ও নবজাগরণের অগ্রদূত হিসেবে।

রামমোহন রায় কলমকে করেছিলেন তাঁর সংগ্রামের প্রধান অস্ত্র। তিনি জানতেন—যে সমাজে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর অজ্ঞতা ঘিরে রেখেছে মানুষকে, সেখানে যুক্তি ও জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে পারে সংবাদপত্রই। সাংবাদিকতার ইতিহাসে তাঁর অগ্রদূত ভূমিকাও তুলে ধরতে হয়। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮২১ সালের ৪ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা সাপ্তাহিক ‘সংবাদ কৌমুদী’। সম্পাদক ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশক তারাচাঁদ দত্ত —যেখানে কেবল খবরই ছাপা হতো না, ছাপা হতো নতুন চিন্তার বীজ। সতীদাহ প্রথা বিলোপ থেকে শুরু করে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা—সব ক্ষেত্রেই তাঁর লেখনী ছিল প্রবল প্রতিবাদের ভাষা। ‘সংবাদ কৌমুদী’ শুধু এক ঐতিহাসিক কাগজ নয়, বরং আধুনিক সাংবাদিকতার শিকড়। ১৮৩৪ সালে ব্রিটিশ সরকারের কড়া সেন্সরশিপের কারণে ‘সংবাদ কৌমুদী’-র প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত এটি হয়ে উঠেছিল এক নবজাগরণের আখড়া, যেখানে কলম ছিল প্রতিবাদের অস্ত্র।

সাংবাদিক রূপেই তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন ধর্মীয় ভণ্ডামি, বহুবিবাহের শোষণ আর সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে। তিনি জানতেন—শাসকের অনুমোদন ছাড়া সংবাদপত্র চালানো সহজ নয়, তবুও তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন। কারণ সত্য প্রচারের শক্তিতে তাঁর অটল বিশ্বাস ছিল।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নৈতিক দায়িত্ব আর জনমত গঠনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করি, তখন মনে হয়—রাজা রামমোহন রায়ের পথই আমাদের পথনির্দেশ। তিনি ছিলেন প্রথমদিকের সেই সাংবাদিক, যিনি কলমের মাধ্যমে সমাজকে প্রশ্ন করতে, প্রতিবাদ করতে ও নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন।

তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত—সংবাদপত্রকে কেবল বাণিজ্য বা ক্ষমতার হাতিয়ার না করে, মানুষের মুক্তি ও অগ্রগতির কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে তোলা।

রাজা রামমোহন রায় ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন—প্রতিটি কলমের নেপথ্যে, প্রতিটি সৎ সাংবাদিকতার মূলে।

Loading