সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: গোয়াল চালায় বসে বঁটিতে গরুর জন্য খড় কাটতে কাটতে তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, আমরা চাষি, চাষবাস করি। চাষি হওয়ার জন্য এক পরিতৃপ্তির হাসি চোখ মুখ থেকে ছড়িয়ে পড়ল কালিপদ সরকারের সারা শরীরে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর ভাই শ্যামাপদ সরকার। তিনিও মিষ্টি হাসি হেসে দাদাকে সমর্থন জানালেন। এই দুই ভাইয়ের বাড়ি গোঘাটের কুমুড়সা গ্রামে। তাঁদের বিঘে আষ্টেক জমি আছে। কিছু জমিতে ভাগ চাষ করেন। একেবারে চাষা পরিবার। তার থেকেও বড় কথা তাঁদের মনের উদারতা। চার-চারটে গ্রামের মানুষের সুবিধা হবে জেনে একেবারে পাকা রাস্তার ধারে ছিলামপুর মোড় মাথায় থাকা ১৫ শতক গুরুত্বপূর্ণ জমি দান করে দিলেন প্রশাসনকে।

রেজিস্ট্রিও হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ জানালেন, ওই জমির বর্তমান মূল্য প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা। তাঁরা ওই দুই ভাইয়ের এই উদারতা দেখে অভিভূত আপ্লুত। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোমিন খান বললেন, ওনারা যে এত মূল্যবান জমি গ্রামের মানুষের জন্য দান করে দেবেন আমরা ভাবতেও পারছিনা। এই রকম মানুষ যে আমাদের এলাকায় আছেন এটা ভেবেই আমরা গর্বিত, আনন্দিত। এর ফলে কমপক্ষে চারটি গ্রামের মানুষের ভীষণ সুবিধা হবে। এই জায়গায় উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলে চারদিক থেকে গ্রামের মানুষ অনায়াসে এসে পৌঁছাতে পারবেন। ওনারা যে কত বড় কাজ করেছেন তা এই সমস্ত গ্রামের মানুষ বুঝতে পারছেন। অতীশ বেতাল নামে আর এক যুবক বলেন, ওনারা ওই জমি দান করাই আমাদের খুব উপকার হয়েছে। ওই জমির দাম কমপক্ষে কুড়ি লক্ষ টাকা। তাই ওনারা তা দান করায় আমরা গর্বিত। ওনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিছুটা দূরে পাশের গ্রামের বাসিন্দা শেখ মান্নান হোসেনের ছিলামপুর মোড়ে সাইকেল মেরামতের দোকান আছে।

তিনি বলেন, ওই জায়গাটার প্রচুর দাম। তবুও গ্রামের মানুষের ভালর কথা ভেবে ওনারা জায়গাটা দিয়েছেন। এর আগেও একটি কমিউনিটি টয়লেটের জন্য জায়গা দিয়েছিলেন। ওনারা খুবই ভাল মানুষ। এতে গ্রামের মানুষের খুব উপকার হল। অন্যদিকে দুই ভাই কালিপদ সরকার ও শ্যামাপদ সরকার বলেন, এখানকার মানুষ চাইছিলেন চারটি গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে উঠুক। তাই আমাদেরকে জায়গার জন্য বলা হয়েছিল। আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। এতে শুধু আমাদের নয়, সকলের উপকার হবে। বলতে বলতে দুই ভাইয়ের চোখেমুখে এক তৃপ্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছিল। যেন সেই তৃপ্তির মধ্যে লুকিয়ে ছিল প্রকৃত চাষি হওয়ার অহংকার। যে অহংকার তাঁদেরই সাজে। যেন তাঁরা এটাই বলতে চাইছিলেন পেশা যাই হোক না কেন, ভাল মন ভাল কাজই একমাত্র মানসিক শান্তি আনতে পারে।
More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি