October 5, 2025

গ্রামে গ্রামে বহুরূপী সেজে পথনাটিকার মাধ্যমে ছড়া-কবিতায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রচার করছেন খানাকুলের প্রধান শিক্ষক

সোমালিয়া সংবাদ, খানাকুল: সতীদাহ প্রথা বন্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়। আর সেই রামমোহনের পদধূলিধন্য খানাকুলের এক শিক্ষক বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে বহুরূপী সেজে গ্রামে গ্রামে পথনাটিকার মাধ্যমে ছড়ায়-গানে এলাকার মানুষকে সচেতন করে চলেছেন। বৃহস্পতিবার খানাকুল ও আরামবাগ সীমান্তবর্তী তিলকচক গ্রামে সেরকমই দৃশ্য দেখা গেল। খানাকুলের মাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস মুখার্জি বহুরূপী সেজে গ্রামের মানুষদেরকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন। আর গুণমুগ্ধ শ্রোতার মত গ্রামের মানুষজন তা মন দিয়ে শুনছেন। দেবাশিসবাবু নিজেকে সকলের কাছে বহুরূপী ‘গোলাপসুন্দরী’ নামে পরিচয় করাচ্ছেন। পরনে বিভিন্ন রংয়ের জোড়াতালি দেওয়া পোশাক পরে নিজেকে সত্তিকারের এক বহুরূপীর মত তৈরি করেছেন। গালে-কপালে রঙ, হাতে বালা, পায়ে নুপুর।  আর থালা বাজিয়ে নেচে নেচে গান গেয়ে গেয়ে নাবালিকার বিয়ে দিলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা তুলে ধরেছেন। তিনি রীতিমতো ছড়া কেটে বলছেন, ‘আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেবে না/ বাবা-মা হয়ে তাদের বিপদে ফেলবে না/ অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়ে পড়বে রোগে/ তোমাদেরই কষ্ট হবে মেয়ে যদি ভোগে।’ গ্রামবাসীরাও তার এই সব কথা বেশ উপভোগ করছেন।  দেবাশিসবাবু অর্থাৎ বহুরূপী গোলাপসুন্দরী যখন বলেন ‘মেয়েদের ভাল করে লেখাপড়া শেখাও/ লেখাপড়া শিখিয়ে তাদের দেশ গঠনে লাগাও’ তখন গ্রামবাসীদের হাততালি দেখে অভিভূত বহুরূপী প্রধান শিক্ষক নিজেও। গ্রামবাসীরা যে তাঁর এইসব কথা ভালোভাবে গ্রহণ করছেন তা উপলব্ধি করেই তাঁর এই কাজ অনেকটা সার্থক বলে তিনি জানালেন।

দেবাশিসবাবু বলেন, আগের থেকে এখন বাল্যবিবাহ অনেকটা কমে গেলেও এখনও গ্রামে গঞ্জে আঠারো বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া চলছে।  আর এ ব্যাপারে সকলের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই আমার এই উদ্যোগ। তিনি বলেন, শিক্ষক হলেন সমাজ গড়ার কারিগর। ভালো-মন্দ নিয়ে সমাজকে সচেতন করাই আমাদের কাজ। শুধু তো ক্লাসে লেখাপড়া শেখানোতেই আমাদের দায়িত্ব শেষ নয়। এর বাইরেও আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমি তাই দেখলাম এই ছুটির সময়ে বহুরূপী সেজে যদি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায় তাহলে এই সমাজ উপকৃত হবে। অন্যদিকে ওই গ্রামের বাসিন্দা সজল পাল বলেন, যখন শুনলাম বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে উনি বহুরূপী সেজে আসছেন তখনই অনেক জরুরী কাজ ফেলে চলে এসেছি। কবিতা ও ছড়া আকারে উনি যেভাবে বোঝালেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওই গ্রামেরই ছাত্রী শ্রেয়া মালিক বলে, কোন নাবালিকা নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে না। তাই এ ব্যাপারে বাবা-মায়েদেরকেই অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। আর উনি যেভাবে বুঝিয়ে গেলেন আশাকরি এই গ্রামের আর কোন বাবা-মাই আঠারো বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেবেন না।

Loading