সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: ওসি মানে থানার বড়বাবু। তাই বলে শুধু এলাকার নিরাপত্তা রক্ষার কাজেই দায়িত্ব শেষ নয়। তিনি থানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অফিসার, কর্মী থেকে শুরু করে থানা এলাকার সমস্ত মানুষের অভিভাবকও বটে। আর বিদায় বেলায় সেকথাই একেবারে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে দিলেন গোঘাট থানার বিদায়ী ওসি অনিল রাজ। আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যাওয়া থানার এক সিভিক ভলেন্টিয়ার রাজীব কুণ্ডুর পাশে দাঁড়ালেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে রাজীবের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তাঁর পাশে সবরকম ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন অনিল রাজ। ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারের বাড়ি গোঘাটের কামারপুকুরের সাতবেড়িয়ায়। অত্যন্ত অভাবী পরিবার। বাড়িতে রয়েছেন বয়স্ক বাবা-মা। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজীব ছোট। তাঁর আর্থিক উপার্জনেই সংসার চলে। অথচ মাস আটেক আগে হঠাৎই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আরামবাগ, কলকাতা হয়ে ভেলোরে গিয়েও চিকিৎসা করান। সেখানেই ধরা পড়ে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। আর তা জানার পরেই বিদায়ী ওসি অনিল রাজ রাজীবকে থানায় ডেকে এনে সাহস দেন, ভরসা যোগান। তাঁরা যে সকলেই তাঁর পাশে আছেন তা বোঝান। শুধু তাই নয়, চিকিৎসার জন্য আর্থিক দায়-দায়িত্বও নিজের হাতে তুলে নেন বিদায়ী ওসি অনিলরাজ। জানা গেছে, ছেলের জন্য একটা কিডনি দান করছেন মা বনমালী কুণ্ডু। কিন্তু এর জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৫ লক্ষ টাকার মত পাওয়া যাবে। এছাড়া জমি-জায়গা বিক্রি করে কিছু জোগাড় হয়েছে। এখনও প্রয়োজন ছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। আর সে ব্যাপারেই এগিয়ে আসেন বিদায়ী ওসি। তাঁরই উদ্যোগে হুগলি গ্রামীণ পুলিশের এস পি আমনদীপ, আরামবাগ এসডিপিও অভিষেক মন্ডল, গোঘাট থানার অফিসার ও সহকর্মীরা একযোগে আরও প্রায় ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে অনিল রাজের বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ওই টাকা তাঁরা তুলে দেন রাজীবের হাতে। শুধু তাই নয়, বিদায়ী ওসি অনিলরাজ জানিয়েছেন, রাজীবের অপারেশন না হওয়া পর্যন্ত তাঁর পাশে থাকবেন। বাকি টাকা জোগাড়র ব্যবস্থা করবেন। বিদায়ী ওসি অনিল রাজের মানবিকতায় উচ্ছ্বসিত রাজীবের পরিবার। শুধু তাই নয়, থানার অন্যান্য অফিসার, সহকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই তাঁর ভূমিকায় আপ্লুত, অভিভূত। এ বিষয়ে জলভরা চোখে রাজীব শুধু বলেন, আমি বড়বাবুর কাছে চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। অন্যদিকে বিদায়ী ওসি অনিল রাজ বলেন, আমি বদলি হয়ে গেলেও এই জেলাতেই থাকছি। আমরা সবাই একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তাই ও সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত আমরা সকলেই ওর পাশে থাকব।
More Stories
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির গোঘাট এক নম্বর আঞ্চলিক কমিটির তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গোঘাটে দুর্গোৎসবের মূল আকর্ষণ ‘রাবণ কাটা’ রথের মেলা
রামকৃষ্ণ সেতু ২৪x৫ ঘন্টা খোলা রাখার আবেদন মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া পর্যন্ত — দুর্গাপুজোয় নির্বিঘ্ন যাতায়াতের স্বার্থে বিধায়ক মধুসূদন বাগের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি