October 5, 2025

দেওয়ালির আগে চাহিদা বেড়েছে মাটির প্রদীপের। কিন্তু মাটির যোগান কম থাকায় কমেছে লভ্যাংশও

সোমালিয়া সংবাদ, গোঘাট: সামনেই আলোর উৎসব দীপাবলি। আর দীপাবলির আগে মাটির প্রদীপ সহ বিভিন্ন উৎসব সামগ্রী তৈরি করতে ব্যস্ততার ধুম পড়ে যায় কুমোর পাড়াগুলিতে। বর্তমানে এলইডি লাইটের রমরমাতে গত কয়েক বছর ধরে সেই ব্যস্ততা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। তার ওপর গত দু’বছর করোনা মহামারীর জন্য প্রদীপের চাহিদা একেবারে তলানিতে নেমে এসেছিল। কিন্তু এবছর সেই দুরবস্থা কাটিয়ে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছেন আরামবাগ মহকুমার কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্পীরা। তাঁরা জানালেন, দিনদিন যেভাবে প্রদীপের চাহিদা কমতে বসেছিল এ বছর যেন অনেকটাই উল্টো ছবি। গোঘাটের আকতপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী হারাধন পাল বলেন, প্রদীপ বিক্রি করে এখন লাভ অনেকটাই কম। কিন্তু এ বছর বিভিন্ন দোকান থেকে প্রচুর অর্ডার আসছে। তাঁরা অনেক বেশি বেশি করে প্রদীপ অর্ডার দিচ্ছেন। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। কিন্তু প্রদীপ তৈরির জন্য কাঁচামাল অর্থাৎ মাটির যোগান খুবই কম। বাইরে থেকে মাটি আনতে গেলে প্রচুর খরচ পড়ছে। পেট্রোল-ডিজেল ইত্যাদির দাম বেড়েছে। তাই লাভের পরিমাণ খুবই কমে গেছে। হারাধনবাবু আরও জানালেন, তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রদীপ আছে। তাঁরা দু’টাকা থেকে শুরু করে চার টাকা এবং তার থেকেও বেশি দামের প্রদীপ তৈরি করে থাকেন। বিভিন্ন দোকানে পাইকারিভাবে সেগুলি বিক্রি করে দেন। এবছর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা উপকৃত হবেন বলে তাঁর মনে হয়েছে। তবে লভ্যাংশ বেশি থাকলে ভাল হতো। তাঁর ছেলে বিদ্যুৎ পাল বলেন, আগের থেকে চাহিদা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়লেও প্রদীপের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। প্রদীপের দাম এক টাকা বেশি বললেই অনেকে এলইডি লাইটের দিকে ছুটছেন।

হারাধনবাবু প্রায় ৪৫ বছর এই মাটির কাজ করে চলেছেন। এবছর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাঁর স্ত্রী প্রতিমা পালও কাজে হাত লাগিয়েছেন। প্রতিমা দেবী বলেন, আমি একটা নতুন ডিজাইনের প্রদীপ তৈরি করেছি। বিভিন্ন দোকানে সেটা দেখাতে তাঁরা ওই প্রদীপই তৈরি করার অর্ডার দিয়েছেন। খুব ভাল লাগছে। আরামবাগ বাজারের মাটির প্রদীপ ও মাটির অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রেতা শম্ভু পাত্র জানালেন, এখন থেকেই প্রদীপ কেনা শুরু হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এবছর রেকর্ড বিক্রি হবে। এতটা চাহিদা আমরা আশা করিনি, তাই নতুন করে আবার মৃৎশিল্পীদের কাছে প্রদীপের জন্য অর্ডার দিতে হচ্ছে।  গোঘাটের মিরগা গ্রামের মৃৎশিল্পী শংকরী পাল বলেন, বিভিন্ন দোকান থেকে এবার অনেক বেশি অর্ডার পাচ্ছি, আগে কাঁচামাল বেশি তোলা ছিল না। ফলে সমস্যায় পড়ছি। তবুও বহুদিন পর চাহিদা বাড়ায় ভীষণ আনন্দ পাচ্ছি। কাজ করে ভাল লাগছে। কিন্তু কেন হঠাৎ মাটির প্রদীপের এই চাহিদা? মৃৎশিল্পীরা অবশ্য তা বলতে পারলেন না। তবে আরামবাগের বাজারে প্রদীপ কিনতে আসা গোঘাটের বেঙ্গাইয়ের বাসিন্দা অতনু দে বলেন, বৈদ্যুতিক আলোক মালা অনেকটাই বিপদজনক। তাছাড়া পরিবেশ সহায়ক নয়। তাই এবছর আবার মাটির প্রদীপ কিনছি। আর তাই বহুদিন পর হাসি ফুটছে আরামবাগ মহাকুমার  মৃৎশিল্পী ও মাটির জিনিস বিক্রেতাদের।

Loading